—প্রতীকী ছবি।
আমের জেলা মালদহ। অথচ সেই মালদহেই জামাই-ষষ্ঠীর বাজারে গাছ-পাকা হিমসাগরের দাম সেঞ্চুরি হাঁকছে। চড়া দর গোপালভোগেরও। ইথিলিন দিকে পাকানো অপরিপক্ব ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। জেলারই কালিয়াচকের বোম্বাই লিচুও ১০০ টাকা কেজি। দামে দোসর ইলিশও। এক কেজি সাইজের ইলিশ দু’হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। জামাইয়ের পাতে ইলিশ থেকে আম, লিচু তুলে দিতে হাত পুড়ছে শ্বশুর-শাশুড়িদের। মালদহ থেকে যাওয়া আমের দাম পাশের উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতেও একই রকম চড়া। দাম চড়েছে ইলিশ, রুই, কাতলা মাছ থেকে শুরু করে চিংড়িরও।
ষষ্ঠীতে জামাইদের সামনে মাছ, মাংস, আম, লিচু-সহ রকমারি খাবারের থালা সাজিয়ে দিতে কার্পণ্য করেন না শ্বশুর-শাশুড়িরা। কিন্তু এ বার জামাইষষ্ঠীর বাজারে মাছ, মাংস থেকে শুরু করে ফলের দাম অনেকটাই বেশি থাকায় হাতে ছ্যাঁকা লাগার জোগাড়। বেঙ্গালুরুতে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে চাকুরে জামাই এ বার তিন বছর পরে এসেছেন মালদহের দেশবন্ধুপাড়ার শ্বশুরবাড়িতে। আজ, বুধবার জামাইষষ্ঠীর জন্য মাছ, মাংসের দর খুব চড়া থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করে মঙ্গলবার মাছ, মাংস, ফল কিনতে রথবাড়ি বাজারে গিয়েছিলেন শ্বশুর স্বদেশ দাস। তিনি বলেন, ‘‘তিন বছর পরে জামাই বাড়িতে এসেছে। খাসির পাশাপাশি ইলিশ ও চিংড়ি কিনব ভেবেছিলাম। কিন্তু রথবাড়ি বাজারে এক কেজির সাইজের ইলিশের দাম দু’হাজার টাকা। চিংড়ি মাছও ৬০০ টাকা কেজি। জামাইষষ্ঠী বলে পরিমাণে কম করে ওই দুই ধরনের মাছ নিতে হল।’’ বিবেকানন্দপল্লির কুসুম রায় বলেন, ‘‘মালদহ আমের জন্য বিখ্যাত। অথচ মালদহের হিমসাগর আম এখন ১০০ টাকা কেজি, এটা ভাবা যায়? জামাইয়ের পাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়ে কিনলাম।’’ আম বিক্রেতা যদুনন্দন দাস বলেন, ‘‘আবহাওয়া প্রতিকূলতার জন্য এ বার মালদহে আমের ফলন কম। জোগান কম থাকায় দাম বেশি।’’
এদিকে দক্ষিণ দিনাজপুরের বিভিন্ন বাজারেও গত বছরের তুলনায় এ বছর মাছ এবং মাংস কেজিতে ১০০ থেকে দেড়শো টাকা বেড়েছে। বালুরঘাট তহবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতা স্বপন সাহার দাবি, বাংলাদেশ থেকে ইলিশ পর্যাপ্ত পরিমাণ যেমন আসেনি, তেমনই জেলা থেকে খাসি বাইরে চলে যাচ্ছে বলে দাম বেশি। ফলন তেমন না হওয়ায় আমেরও দাম বেশি। যদিও, এই চড়া দামেই জিনিস কিনে বিভিন্ন ‘ডিস’ তৈরি করে ক্রেতা-আকর্ষণে নেমেছে বালুরঘাটের একাধিক রেস্তরাঁ। এক রেস্তরাঁর মালিক পক্ষের তরফে সায়ন সরকার বলেন, ‘‘জামাই-ষষ্ঠীর রাতের ডিনারে অনেকেই নতুন মেনু পছন্দ করছেন। আমরা ডাব-চিংড়ি ছাড়াও নানা রকম মেনু, ফল এবং মিষ্টি দিয়ে জামাইষষ্ঠীর প্লেট সাজিয়েছি।’’ জামাই-ষষ্ঠীর বাজারে মাছ, মাংসের চড়া দাম উত্তর দিনাজপুর জেলার বাজারগুলিতেও। মোহনবাটী বাজারে আসা এক ক্রেতা পপি রায় বলেন, "জামাই ষষ্ঠীতে এমনিতেই বাজারের প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি থাকে। এ বছরও আম, জাম, লিচু, মাছ— সবেরই দাম বেশি।’’ ইসলামপুরের এক ফল বিক্রেতা পরেশ দাস বলেন, ‘‘রানাঘাটের হিমসাগর আম বাজারে এসেছে। তাই দাম একটু বেশি।’’
তথ্য সহায়তা: জয়ন্ত সেন, শান্তশ্রী মজুমদার ও অভিজিৎ পাল