চব্বিশ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩৩৭ মিলিমিটার! শুনেই চমকে উঠেছি। এখন তো বর্ষাকাল মানে হাতে গোনা কয়েক দিনের বৃষ্টি। জলবায়ু পরিবর্তেনের জন্যেই হোক অথবা শহরে ক্রমাগত বেড়ে চলা দূষণের কারণেই হোক, শিলিগুড়িতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই কমে গিয়েছে। সে কারণেই রবিবার দুপুরে যখন শুনলাম গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩৩৭ মিলিমিটার, তখন চমকে যাওয়াটা স্বাভাবিক। মনে পড়ে গেল ছেলেবেলা-কৈশোরের স্মৃতিও।
তখন বর্ষাকাল মানেই প্রতিদিন বৃষ্টি। মুষলধারে হোক বা ইলশেগুঁড়ি কিংবা ঝিরঝিরি। দিন-রাত বৃষ্টি চলছেই। টানা সাত দিনও বৃষ্টি চলেছে। এক দিন থেমে ফের আবার দিন কয়েক ধরে বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে স্কুল-পাঠশালায় রেনি ডে। এখনকার পড়ুয়ারা বোধ হয় রেনি-ডে শব্দটার সঙ্গে সেই অর্থে পরিচিতই নয়। চারদিকে প্যাচপ্যাচে পরিবেশ। ঘরবাড়ি স্যাঁতসেঁতে হয়ে গিয়েছে, জামাকাপড় কিছুতেই শুকোয় না। সব মাঠ জলে ভরা। তার মধ্যেই চলছে ফুটবল। মহানন্দা-জোড়াপানি-ফুলেশ্বরী নদীর জল ঢুকে শহরে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। শহরের নর্দমাগুলিতে ভেসে বেড়াচ্ছে নদীয়ালি মাছ। ট্যাংরা, দ্বারিকা-র মতো অন্তত ২০ প্রজাতির নদীয়ালি মাছ সে সময়ে বর্ষাতে শিলিগুড়ির নর্দমা-জমা জলেই মিলত। আমরা গামছা পেতে সেই মাছগুলি ধরতাম। মনে আছে কলেজপাড়ার জমা জল দিয়ে খলবল করে মাছ ভেসে যাচ্ছে।
তখন কিন্তু মহানন্দা, ফুলেশ্বরী নদীর পাড়ে এত বসতি ছিল না। নদীর পাড় উপচে পড়ত বর্ষার জলে। পাড়ায় জমা জল আর নদী মিলেমিশে একাকার। এ বছরও অনেকটাই সেরকম। গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি চলছে। শহরের নর্দমা উপচে পড়েছে। বিভিন্ন গলির রাস্তা জলমগ্ন। তবে তার মানে কিন্তু এই নয় যে পুরোনো দিন ফিরে এসেছে, দূষণ কমেছে।
এটা কিন্তু দূষণেরই আর একটা কারণ। সে কারণেই একদিনে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। হাতে আর সময় নেই, আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে। যথেচ্ছ ভাবে গাছ কাটা বন্ধ হবে। নদীকে গতি ফিরিয়ে দিতে হবে। বাতাসে দুষণ ছড়ানো আটকাতে হবে। যাই হোক, গত দু’একদিন নাগাড়ে বৃষ্টি আমাকে নস্টালজিক করেছে। মনে পড়ে যাচ্ছে, ছোটবেলায় বর্ষাকালে এক চিনা ব্যক্তি শহর জুড়ে লাঠি ছুড়ে জাগলিঙের খেলা দেখাতেন। বর্ষাকালেও পেটের তাগিদে সেই চিনাম্যান পাড়ায় খেলা দেখাতে আসতেন। সেই চিনাম্যান আর ফিরবে না, তবে সকলে মিলে রুখে দাঁড়ালে দূষণমুক্ত পরিবেশ কিন্তু অবশ্যই ফিরে আসবে।