চার কন্যা। —নিজস্ব চিত্র।
দেবীপক্ষের জন্য অপেক্ষা করছেন চার মেয়ে।
একই বছরে বাবা-মা মারা যাওয়ার পরে যে মেয়েটিকে বেশ কয়েক বছর আগে অন্য এক শহরের স্কুল থেকে জলপাইগুড়ির হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই মেয়েটি অন্যদের গয়না তৈরির তালিম দেওয়া শুরু করবেন। দেবীপক্ষের সূচনায় মেয়েটি শিক্ষিকা হবেন।
যে মেয়েকে এনজেপি প্ল্যাটফর্ম থেকে কুড়িয়ে পেয়ে রেলপুলিশ হোমে এনে রেখেছিল, এখন কলেজে প্রথম বর্ষে পড়া সেই মেয়েটি বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তরাঁ খুলে স্বনির্ভর হয়ে অপেক্ষা করছেন দেবীপক্ষের। মহালয়ার সকাল থেকে নতুন পদের আয়োজন থাকবে রেস্তরাঁয়। পরিকল্পপনা রয়েছে ভেটকির চপ রাখার।
যে মেয়েটিকে নিয়ে পরিবারেরই এক জন অজানা কোনও কারণে ভিন্ রাজ্যের পথে রওনা হয়েছিলেন এবং মেয়েটিকে হোমে এনে রেখেছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সেই মেয়েটিও অপেক্ষমাণ দেবীপক্ষের।
যে মেয়েটি ভুলে গিয়েছেন বাবা-মায়ের নাম, সেই মেয়েটি এখন ম্যানেজমেন্টের ছাত্রী। দেবীপক্ষের অপেক্ষায় তিনিও বসে আছেন। রং-তুলি দিয়ে সাজাচ্ছেন নিজেদের রেস্তরাঁ।
জলপাইগুড়ির কর্মতীর্থে অনাথ, কুড়িয়ে পাওযা মেয়েদের রেস্তরাঁয় এ বার দেবীপক্ষের আগেই শুরু হতে চলেছে গয়না তৈরি আর সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কয়েক বছর আগে অনাথ হয়ে ঘর-বাড়ি হারিয়ে যে মেয়েদের জলপাইগুড়ির অনুভব হোমে আসা, সেই মেয়েরাই গত দু’বছরে স্বনির্ভর হয়ে অন্য
মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রশিক্ষণ দেবেন। সেই প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে অকালবোধনের আগেই।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, আঠারো বছর পেরনোর পরে হোমে ঠাঁই হয় না। অনুভব হোমে থেকে বড় হওয়া চার মেয়ের আঠারো বছর হওয়ার পরে কর্তৃপক্ষ ওঁদের স্বনির্ভর হওয়ার জন্য সরকারি কর্মতীর্থ ভবনের একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেন। সেই ঘরে মেয়েরা রেস্তরাঁ চালাতে শুরু করেন। দু’বছর পরে সেই রেস্তরাঁর সঙ্গেই শুরু হচ্ছে অন্যান্য মেয়েদের তালিম দেওয়া। চার কন্যার এক জন অনামিকা বলেন, ‘‘রেস্তরাঁ চালাব, সঙ্গে অন্য মেয়েদের প্রশিক্ষণও দেব। আমরা গয়না বানানোর কাজ জানি, সেলাই জানি। সে সবই শেখাব। আমাদের মতো অন্যদেরও সাবলম্বী করে তুলব।’’
মহালয়ার দিন থেকেই মেয়েদের এই রেস্তরাঁয় থাকবে নতুন নতুন পদ। প্রথম বর্ষের ছাত্রী আপনা বললেন, ‘‘বাজারে ভাল ভেটকি আসছে। ভেটকির চপ থাকবে। অষ্টমীতে পোলাও থাকবে। অন্য দিন মাংসের পদ থাকবে। সন্ধেবেলায় থাকবে জলখাবারের আয়োজন। পুজোর সময় অনেকে এখানে আড্ডা দিতেও পারবেন।’’
রং-তুলিতে রেস্তরাঁ সাজাচ্ছেন আফসানা। ম্যানেজমেন্টের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী আফসানা শেখাবেন হাতের কাজ। রেস্তরাঁর পাশের ঘরে শেখানো হবে সেলাইয়ের কাজ আর গয়না তৈরি। রেস্তরাঁই এই মেয়েদের থাকা-খাওয়া এবং পড়াশোনার খরচ জোগাড়ের উৎস। এই অবস্থায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভাবনা কেন? ললিতার কথায়, ‘‘ছোটবেলা থেকে হোমে থেকেছি। তখন পুজোর সময় বাসে করে পাহারা দিয়ে ঠাকুর দেখতে নিয়ে যাওয়া হত। এখন নিজেরা টোটো ভাড়া করে ইচ্ছেমতো যেতে পারি। আমরা চাই, অন্য মেয়েরাও যাতে নিজেদের ইচ্ছেমতো চলতে পারেন।’’