নিবাস: সোমবারও উপাচার্যের কোয়ার্টার তালাবন্ধ ছিল। নিজস্ব চিত্র।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কিছু জায়গা পর্যটনের মতো সরকারি দফতর এবং বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অনেকদিন ধরেই অভিযোগ উঠেছে। উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। এসএসসি-কাণ্ডে উপাচার্যকে সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদ এবং কলকাতায় তলবের পরে সমিতির দাবি, বেসরকারি সংস্থার হাতে জমি দেওয়ার বিষয়টিও এ বার সিবিআইয়ের তদন্ত করে দেখা দরকার। যদিও এর আগে, বারবার সমিতির দাবি ছিল, কী-কী শর্তে ও কী উদ্দেশ্যে জমি দেওয়া হচ্ছে, পরিষ্কার করে তা জানানো হোক কর্তৃপক্ষের তরফে। শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক। কিন্তু তার সদুত্তর মেলেনি বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় সমিতির বক্তব্য, কর্তৃপক্ষ এ সব না জানানোয় সন্দেহ আরও বাড়ছে।
শিক্ষক সমিতির সম্পাদক অর্ধেন্দু মণ্ডল বলেন, ‘‘বিভিন্ন সংস্থার হাতে জমি তুলে দিতে উপাচার্য সক্রিয় বলেই অভিযোগ পাচ্ছি। আমরা তার বিরোধী। আমরা লিখিত ভাবে তাঁকে সমস্ত জানাতে বলেছি। তিনি জানাচ্ছেন না। তিনি যদি না চান বা জড়িত না হন, তা হলে স্পষ্ট বলতেই পারতেন। না বলায়, সন্দেহ বাড়ছে। শিক্ষকদের কাছের আমরাও জবাব দিতে পারছি না।’’ সমিতির সভাপতি সমর বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি বেসরকারি সংস্থাকে কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, এর মধ্যে অনৈতিক কোনও লেনদেন আছে কি না— সবই সিবিআইয়ের তদন্তের আওতায় আাসা দরকার।’’ উপাচার্যকে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। মেসেজ করা হলে উত্তর মেলেনি।
শিক্ষক সমিতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রেই খবর, ১৯৬২ সালে এলাকার বাসিন্দাদের দান করা জমিতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়। ৩৩১ একরের মতো সবুজে মোড়া পরিবেশ। সামনে দিয়েই এখন এশিয়ান হাইওয়ে-২ গিয়েছে। জলপাইগুড়িতে ৩৭ একরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস। ভারত-চিন যুদ্ধের সময় গোটা বিশ্ববিদ্যালয় সেনাবাহিনীর আওতায় ছিল। জওয়ানেরা সেখানে থাকতেন। পরবর্তী কালে, ক্যাম্পাসে থাকা চা বাগান লিজ় দেওয়া হয়েছিল। একটি ব্যাঙ্কের শাখা, এটিএমের জন্য ২-এ গেটের পাশে, ১২ কাঠার মতো জমি লিজ়ে দেওয়া হয়েছে। গত এক দশক ধরে মূল রাস্তার পাশে ক্যাম্পাসের এক একর জমি চায় শিলিগুড়ি পুলিশ। প্রস্তাবিত শিবমন্দির থানার জন্য। কর্তৃপক্ষ তাতে সম্মতি দিয়ে কলকাতায় নথি পাঠালেও, কাজ আর এগোয়নি বলে অভিযোগ। অভিযোগ, রাস্তার ধারে এশিয়ান হাইওয়ে লাগোয়া ক্যাম্পাসের ৩৮ একর জমি রাজ্য পর্যটন দফতরকে হস্তান্তরের কথা হয়েছে। পর্যটন দফতরের তরফে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে পরিকাঠামো করে হোটেল ম্যানেজমেন্ট, টুরিজ়ম কোর্স হবে। পাঁচতারা হোটেল করারও কথা।
ক্যাম্পাসে চা বাগান এবং রবার চাষের জমি রয়েছে ৬০ একরের মতো। চা বাগানের লিজের মেয়াদ বছর তিনেক আগে ফুরিয়েছে। মামলা চলার পরে, এখন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে। সেখানেও ‘পিপিপি’ (প্রাইভেট পাব্লিক পার্টনারশিপ) মডেলে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে দাবি। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতিকে এড়িয়ে সে বিষয়ে ‘নো অবজেকশন’-ও দেওয়া হয়েছে।
বিজেপির শিলিগুড়ি যুব মোর্চার সভাপতি অরিজিৎ দাস বলেন, ‘‘কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বেসরকারি হাতে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, এ বার এ সবও খতিয়ে দেখা হোক। এর পিছনে কোনও লেনদেন আছে কি না, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দেখুক।’’
দার্জিলিং জেলা এসএফআইয়ের প্রাক্তন সম্পাদক তথা সিপিএমের জেলা কমিটির নেতা সৌরভ দাস বলেন, ‘‘সিবিআই তদন্ত করে দেখুক, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার পিছনে কার স্বার্থ কাজ করছে। এর পিছনে পার্থ-যোগ রয়েছে বলে সন্দেহ আমাদের।’’ জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান অলক চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘সরকারি জমি, সরকারি কাজে লাগল ভাল। কিন্তু যদি বেসরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়, সেটা সরকারি নজরে আনতে হবে।’’