পড়ুয়াদের কান্না, বড় বেতন ছেড়ে রইলেন শিক্ষক

সোমবার স্কুলে আসতেই প্রিয় শিক্ষককে ঘিরে ধরে পড়ুয়ারা। এমনকি, ওই শিক্ষককে ছেড়ে না যাওয়ার আকুতি জানাতে গিয়ে আবেগে কেঁদেও ফেলে অনেকে।

Advertisement

বাপি মজুমদার

চাঁচল শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯ ০৪:৩৫
Share:

প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সেলিম। নিজস্ব চিত্র

উচ্চতর বেতনে নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন অন্য স্কুলে। প্রধান শিক্ষকের কাছে ইস্তফাপত্রও জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রিয় শিক্ষককে ছাড়তে নারাজ পড়ুয়ারা।

Advertisement

খবর পেয়ে সোমবার স্কুলে আসতেই তাঁকে ঘিরে ধরে পড়ুয়ারা। এমনকি, ওই শিক্ষককে ছেড়ে না যাওয়ার আকুতি জানাতে গিয়ে আবেগে কেঁদেও ফেলে অনেকে। দুপুর গড়িয়ে তখন বিকেল। পড়ুয়াদের ভালবাসার জোয়ারে ভেসে শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদলালেন পদার্থবিদ্যার ওই শিক্ষক। সোমবার এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল মালদহের চাঁচলের দরিয়াপুর ইমামপুর বারম্বল হাইস্কুল।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ নাদেরুজ্জামান বলেন, ‘‘উনি গ্র্যাজুয়েট স্কেলে এই স্কুলে নিয়োগ পেয়েছিলেন। ফের এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে স্নাতকোত্তর স্কেলে নিয়োগ পেয়েছেন অন্য স্কুলে। এক্ষেত্রে তো আমরা চাইলেও কাউকে আটকে রাখতে পারি না। কিন্তু প্রিয় শিক্ষককে ছাত্রছাত্রীরা যেতে দিয়ে চায়নি। উনি সিদ্ধান্ত বদলানোয় আমাদেরও ভাল লাগছে।’’ স্কুল সূত্রের খবর, গত জানুয়ারি মাসেই এই স্কুলে স্থায়ী পদার্থবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন সেলিম আখতার। অল্পদিনেই ছাত্রদের অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর হলেও তার আগেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিয়ে ওই স্কুলে গ্র্যাজুয়েট বেতনক্রমে সুযোগ পেয়েছিলেন। স্নাতকোত্তর হওয়ার পর ফের তিনি কমিশনের পরীক্ষায় বসেন। তাতে কৃতকার্যও হন। গত শনিবার বাঁকুড়া জেলার ঝিলিমিলি হাইস্কুলে যোগ দেওয়ার নিয়োগপত্র পান তিনি। এক্ষেত্রে নতুন স্কুলে যোগ দেওয়ার জন্য পুরনো স্কুলে ইস্তফাপত্র জমা দিতে হয়। মঙ্গলবার ছিল নতুন স্কলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। তাই এ দিন স্কুলের শুরুতেই প্রধান শিক্ষকের ঘরে গিয়ে ইস্তফা দেন তিনি। এ দিন বিষয়টি জানাজানি হতেই ভেঙে পড়ে পড়ুয়ারা। দুপুরে সেলিমকে ঘিরে ধরে প্রায় হাজারখানেক ছাত্রছাত্রী। প্রথমে বিষয়টি হাল্কা ভাবেই নেন তিনি। কিন্তু বিকেল পর্যন্ত পড়ুয়ারা তাদের দাবিতে অনড় থাকে। অনেককেই চোখ মুছতে দেখা যায়। শেষে পড়ুয়াদের আবেদন-নিবেদনে মন গলে সেলিমের। অনেকটাই আর্থিক ক্ষতি হবে জেনেও পড়ুয়াদের আবেদনের কাছে হার মেনে সিদ্ধান্ত পাল্টান সেলিম। পরে তিনি বলেন, ‘‘একজন শিক্ষকের কাছে ছাত্রছাত্রীরাই সব। ওরা যে আমাকে এতটা ভালবাসে, ভরসা করে, বুঝতে পারিনি। তাই থেকেই গেলাম।’’

Advertisement

আর প্রিয় শিক্ষক তাদের আবেদনে সাড়া দেওয়ায় খুশি পড়ুয়ারা। দশম ও একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া রিঙ্কি মণ্ডল, সাহিল রাজ, আসিফ রাজা, রিয়া দাস, মোসাদ্দেক আলিরা জানায়, উনি শুধু ভাল পড়ান, তাই নয়। অল্পদিনে সবার কাছের হয়ে উঠেছেন। এমন একজন শিক্ষককে তারা হারাতে চায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement