প্রতীকী ছবি।
১৫ বছর পর ভাইপোকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী কপিলদেও রজক। সম্পর্কের বাঁধন মনে না থাকলেও কপিলদেও যে তার আপনজন তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি শম্ভুর। সেদিনের কিশোর রবিকুমার আজ যুবক। বাবাকে নিতে এসে তাঁর চোখের কোনে জমেছে জল। শুধু তিনিই নন, কাঁদছেন শম্ভুরকে নিতে আসা প্রত্যেকেই। আর এক প্রৌঢ়কে বাড়ি ফেরাতে পেরে তখন আনন্দে দু’চোখ ভিজে উঠেছে মাসুদ আলম, মহসিন আলমদেরও। সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়ার পর নথিপত্র দেখে তাদের হাতে শম্ভুকে তুলে দিলেন মাসুদরা। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের নিয়ার গোপালপুরে এক সপ্তাহ মাসুদ, মহসিনদের আশ্রয়ে কাটিয়ে পরিবারে সদস্যদের সঙ্গে বিহারের সমস্তিপুরে রওয়ানা হলেন শম্ভু। তাঁকে বিদায় দিতে এসেছিল গোটা গ্রামই। মিলন আর বিদায়ের এই মুহূর্তে জিতে গেল মানবিকতা আর সম্প্রীতিই।
কিছু দিন আগে রাতে এলাকারই একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন শম্ভু। অচেনা ব্যাক্তি, পাশাপাশি কথাবার্তা অসংলগ্ন হওয়ায় বাসিন্দারা গ্রামেরই এক পুলিশ কর্মীকে খবর দেন। উনি এলেও প্রৌঢ়কে দেখেই তিনি ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বলে ফিরে যান। তবে দায় এড়াতে পারেননি স্থানীয় নিয়ার গোপালপুর প্রাথমিক স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক মাসুদ আলম। তিনি প্রৌঢ়কে আশ্রয় দেন। এগিয়ে আসেন প্রতিবেশী মহসিন আলমও। তারপর লাগাতার চেষ্টায় তাঁরা প্রৌঢ়ের বাড়ির ঠিকানা জেনে পুলিশের মাধ্যমে পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
তারপরেই এ দিন গ্রামে আসেন ছেলে রবিকুমার, ভাইপো রাজকুমার ও কাকা কপিলদেও। পরিজনরাই জানালেন, বাড়িতে জমি ছিল। কৃষিকাজ করতেন শম্ভু। কিন্তু একটি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পাওয়ার পর মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি। চিকিৎসা চলছিল, কিন্তু তার মধ্যেই একদিন তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। বছরের পর বছর ধরে খোঁজাখুঁজি করেও তার হদিশ মেলেনি। কপিলদেও বলেন, ‘‘আমরা তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম।’’ স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর দুই ছেলেকে নিয়ে বিপাকে পড়েন তাঁরা স্ত্রী সুনীতাও। তিনি রাঁচিতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্সের কাজ নিয়ে সমস্তিপুর ছেড়ে চলে যান।
বাবা যখন নিখোঁজ হন তখন ছেলে রবির বয়স ছিল আট। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বাবাকে কোনওদিন ফিরে পাব ভাবিনি। মাসুদ, মহসিনের মতো দাদারা ছিলেন বলেই তা সম্ভব হয়েছে। সারাজীবনেও ওদের কথা ভুলব না।’’
মন খারাপ মাসুদ আলম, তার স্ত্রী রহিমা খাতুন, মহসিন আলমদেরও। তাঁদের কথায়, ‘‘এই ক’টা দিন উনি পরিবারেরই একজন হয়ে গিয়েছিলেন। আমাদেরও খারাপ লাগছে, কিন্তু উনি বাড়ি ফিরছেন এতেই আমরা খুশি।’’