প্রতীকী ছবি।
প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি করে দেওয়ার নাম করে বালুরঘাট কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১০ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল। শুক্রবার বালুরঘাট থানায় দেবজ্যোতি সরকার নামে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শহরের রঘুনাথপুরের বাসিন্দা তথা প্রাক্তন সেনাকর্মীর স্ত্রী তিলকি কর্মকার। তিনি চাকরি পাননি। টাকা চেয়েও ফেরত পাননি বলে তিনি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করে বিচার চান। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-কেও লিখিত অভিযোগ করেন বলে দাবি তিলকির। জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে জানান, অভিযোগের তদন্ত হবে।
শহরের বঙ্গি এলাকার বাসিন্দা অভিযুক্ত তৃণমূলের শিক্ষক-নেতা বলে এলাকায় পরিচিত। তিনি শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার সদস্য বলে দল সূত্রে খবর। বেশ কিছু দিন যাবৎ তিনি আত্মগোপন করে রয়েছেন বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর পরিবারের দাবি, তাঁদের ছেলে ‘ফেঁসে গিয়েছেন’। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার বলেন, “জেলায় যে সমস্ত নেতা ও কর্মী প্রতারণা করেছেন, নিরপেক্ষ তদন্ত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।”
২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বেরোয়। সে সময় বালুরঘাট কলেজের ইংরেজি বিভাগের ওই শিক্ষক চাকরি দেওয়ার নামে একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নেন বলে অভিযোগ। এ দিন অভিযোগকারী মহিলা দাবি করেন, “চাকরির আশ্বাস পেয়ে দেবজ্যোতিকে তিন দফায় ১০ লক্ষ টাকা দিই। প্রথম দিকে চাকরি হবে বলে সময়সীমা দিতেন। নিয়োগপত্র মিলবে বলে বালুরঘাটের ডিপিএসসিতে, কলকাতা হাইকোর্টে নিয়ে গিয়ে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা বসিয়ে রাখতেন।” দিনের পর দিন এমন চলতে থাকায় তাঁর সন্দেহ হয়। অভিযোগ, এর পরেই তিনি শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে টাকা ফেরত চাইলেও পাননি। পরে, অবশ্য অসুস্থতার কথা বলায় মাত্র ১০ হাজার টাকা তিনি ফেরত পেয়েছিলেন বলে দাবি করেন। এ দিন তিলকির স্বামী, প্রাক্তন সেনাকর্মী প্রণব কর্মকার বলেন, “বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন চুপ করে ছিলাম। ভেবেছিলাম, টাকা ফেরত পাব। এখন চারিদিকে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসছে দেখে সাহস করে অভিযোগ জানাই।”
অভিযুক্ত শিক্ষককে ফোনে পাওয়া যায়নি। তিনি বাড়িতে নেই বলে জানায় পরিবার। তবে শিক্ষকের বৃদ্ধা মা কল্পনা বলেন, “আমার ছেলে যত টাকা তুলেছে, একটা টাকাও নিজের কাছে রাখেনি। শুনেছি, কোনও এক চক্র সব টাকা নিয়েছে। আমরা এখন আমাদের ব্যাঙ্কে জমানো ও পেনশনের টাকা দিয়ে লক্ষ-লক্ষ টাকা শোধ করছি। ওর শ্বশুরবাড়ি থেকেও টাকা শোধ করা হচ্ছে। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে খুবই দুঃখে রয়েছি।”