জাতীয় সড়ক অবরোধ করে চা বাগানের শ্রমিকেরা। ছবি: সব্যসাচী ঘোষ।
উত্তরবঙ্গের একটি চা শিল্প গোষ্ঠীর ১৬টি বাগানে অচলাবস্থা কাটিয়ে দ্রুত বাগান স্বাভাবিক করার দাবিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন শ্রমিকেরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডুয়ার্সের বাগরাকোট এবং চালসায় ওই গোষ্ঠীর তিনটি বাগানের শ্রমিকেরা এতে যোগ দেন। বাগরাকোট চা বাগানের শ্রমিকেরা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের মিনা মোড় সকাল ৯-১১টা পর্যন্ত অবরোধ করে রাখেন। অন্য দিকে ১১টা থেকে আড়াই ঘণ্টা চালসা মোড়ে অবরোধ করেন মেটেলি ব্লকের নাগেশ্বরী এবং কিলকোট চা বাগানের শ্রমিকেরা। এ ছাড়া মাদারিহাট এবং বীরপাড়াতেও দীর্ঘ ক্ষণ জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখেন চা শ্রমিকেরা। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের চা শ্রমিক সংগঠন প্রোগ্রেসিভ টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের শ্রমিকেরা অবরোধ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ায় কার্যত ডুয়ার্স রুটে যানচলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই গোষ্ঠীর বাগানগুলিতে মজুরি বন্ধ হয়ে রয়েছে বলে শ্রমিকদের দাবি। ২০০২ সাল থেকে গ্র্যাচুইটি পিএফ-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থও বকেয়া রয়েছে বলেও অভিযোগ। একাধিক বার মালিকপক্ষ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার কথা বললেও তা শেষ পর্যন্ত হয়নি বলেই শ্রমিকদের ক্ষোভ, জানান আদিবাসী চা শ্রমিক নেতা জন বারলা। জট কাটাতে শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় শ্রমদফতরের ডাকা ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে এ দিন মালিকপক্ষ আসতে পারবেন না বলে দু’দিন আগে জানালে এ দিন আচমকাই অবরোধের ডাক দেন শ্রমিকেরা। এ দিকে উত্তরবঙ্গে যুগ্ম শ্রম কমিশনার মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, ‘‘আগামী মে মাসে ফের কলকাতায় শ্রমদফতরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে আশা করছি সব পক্ষই যোগ দেবেন।’’
প্রোগ্রেসিভ টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি জন বারলা অভিযোগ করে বলেন, ‘‘শ্রমিকদের কলকাতা অবধি বৈঠকে যাওয়ার টাকা নেই। তাই শিলিগুড়িতেই বৈঠক করতে হবে।’’
এ দিন, এক সঙ্গে অবরোধ হয়েছে বীরপাড়াতেও। বেতন ও রেশন না পেয়ে রাস্তা অবরোধ করেন শ্রমিকেরা। টানা ছ’ঘণ্টা ধরে জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়ক অবরোধ চলায় কার্যত অচল হয়ে পড়ে গোটা ডুয়ার্স। অসম ও শিলিগুড়িগামী কয়েক হাজার গাড়ি দিনভর শ্রমিকদের অবরোধে আটকে থাকে। মালবাজার, বীরপাড়া, মাদারিহাট-সহ ভুটানের গমটু শহর যাতায়াতের সড়ক অবরোধ দীর্ঘ ক্ষণ অবরোধ হয়ে থাকলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। এ দিন সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টে পর্যন্ত বীরপাড়া শহরের কাছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ হয়। বন্ধ হয়ে যায় গমটু–বীরপাড়া যাতায়াতের সড়ক। মাদারিহাট–ফালাকাটা সড়ক বন্ধ করেন শ্রমিকেরা।
যুগ্ম শ্রম আধিকারিক মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, ‘‘আলোচনা চলছে। এই সময়ে আচমকা পথ অবরোধের ঘটনা না ঘটাই কাম্য ছিল।’’
ডুয়ার্সে ওই গোষ্ঠীর ১৪টি বাগান রয়েছে। বাগানগুলিতে সাড়ে ১৯ হাজার শ্রমিক কর্মরত। গত আড়াই মাস ধরে বাগানগুলিতে অচলাবস্থা চলছে। কয়েক বছরের রেশন বকেয়া পড়ে রয়েছে। দু’মাস ধরে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করালেও কোনও মজুরি দিচ্ছেন না। কয়েকটি বাগানে বকেয়া বিল মেটাতে না পারায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। জেনারেটারের মাধ্যমে কারখানা চললেও শ্রমিক বস্তি অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে বাগানগুলিতে। বিনা বেতনে টানা দু’মাস কাজ চালিয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের ঘরে ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ।
এ দিন শ্রমিকদের পথ অবরোধের ঘটনার সমর্থন করেছেন ডান-বাম শ্রমিক নেতারা। আরএসপি নেতা গোপাল প্রধানের কথায়, ‘‘শ্রমিকদের পাশে আমরা সব সময় রয়েছি।’’ চা বাগান বাঁচাও কমিটির নেতা বিষ্ণু ঘাতানি বলেছেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ চা উৎপাদন করাচ্ছে শ্রমিকদের দিয়ে। চা বিক্রি করে লাভের টাকা ঘরে তুললেও শ্রমিকরা তাঁদের ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না। এ কোনও ভাবে মানা যায় না।’’
বৈঠকের দিন ক্ষণ ঘোষণা করা না হলে অবরোধ চলবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। শেষমেশ বিকেল ৩টে নাগাদ ৪ মে বৈঠক হবে বলে প্রশাসন জানানোর পর শ্রমিকেরা অবরোধ তুলে নেন। বীরপাড়া চা বাগানের শ্রমিক রেখা মাহাতো বলেছেন, ‘‘নিদারুণ কষ্টে দিন গুজরান করছি আমরা। বাৎসরিক ছুটির কয়েক দিনের সামান্য টাকা পেয়ে কিছুই হয়নি।’’