মুখোমুখি দুই মন্ত্রী। (বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী ও রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।ছবিঃ সন্দীপ পাল
প্রশাসনের কাজে নেতাদের ‘হস্তক্ষেপ’ আর বরদাস্ত করা হবে না, প্রকাশ্য মঞ্চ থেকেই বার্তা দিলেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়িতে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা-র (এনবিএসটিসি) একটি রক্ষণাবেক্ষণ শেডের উদ্বোধন করেন পরিবহণ মন্ত্রী। উদ্বোধনের পরে সরকারি মঞ্চে বক্তৃতায় কোনও রাখঢাক না করেই মন্ত্রী বলেন, ‘‘কোথাও কোনও অনিয়মের অভিযোগ হলেই ইউনিয়নের নেতারা হস্তক্ষেপ করবেন না। তা সে যে দলের নেতাই হোন না কেন। এ সব আর বরদাস্ত করা হবে না।’’ এই হুঁশিয়ারি যে নেহাতই কথার কথা নয়, তাও বোঝানোর চেষ্টা করেন শুভেন্দুবাবু। তাঁর সাবধান বাণী, ‘‘একটি চেকিং টিম তৈরি হয়েছে। সব নজরে রাখা হচ্ছে।’’ এনবিএসটিসির অনুষ্ঠানের পরে সড়ক পরিবহণ সংগঠনের বার্ষিক সাধারণ সভার উদ্বোধন করেছেন শুভেন্দু। সেখানে নিজের মোবাইল নম্বর, ই-মেল, ফ্যাক্স নম্বর বিলিয়ে শুভেন্দুবাবুর অনুরোধ, কোনও পরিবহণ দফতরে গিয়ে কাজ না হলে, যে কোনও বিচ্যুতি হলে সরাসরি তাঁকে জানাতে।
এ দিন সরকারি এবং বেসরকারি দুই অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর বার্তা, প্রশাসন থেকে রাজনীতিকে দূরে থাকুক। শুক্রবারই কলকাতার সভা করে দলের কাউন্সিলরদের ‘নোটের খিদে’ ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর দিন শিলিগুড়িতে পরিবহণ মন্ত্রীর বক্তব্য ছিল অনেকটাই চাঁচাছোলা। শনিবারের অনুষ্ঠানে নিগমের চেয়ারম্যান সহ অনান্য কর্তারা বারবার বিভিন্ন কাজের সাফল্য, নতুন বাস রুটের কথা ঘোষণা করেছেন। যদিও মন্ত্রী সকলের সামনেই মনে করিয়ে দিয়েছেন, গত কয়েক বছরে নিগমের আয় বাড়লেও, এখনও ক্ষতি চলছেই। পরিসংখ্যান তুলে মন্ত্রী জানান, গত আর্থিক বছরে নিগমের আয় হয়েছে প্রায় ১৩১ কোটি টাকা, কিন্তু ব্যয়ের পরিমাণ ১৯১ কোটি। বছরে ক্ষতি প্রায় ৬০ কোটি। এই প্রসঙ্গেই মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘বকেয়া ডিএ পরিশোধ করা থেকে মাসের প্রথম দিনে মাইনে দেওয়া সব রকম চেষ্টা রাজ্য সরকার করছে। কর্মীদেরও আয় বাড়াতে সাহায্য করতে হবে।’’ সে প্রসঙ্গেই আসে ইউনিয়নের নেতাদের হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গ।
পরিবহণ দফতরের কর্তাদের দাবি, মন্ত্রী সচেতন ভাবেই এই প্রসঙ্গ তুলেছেন। বাম এবং তৃণমূল দুই আমলেই একাধিকবারি নিগমে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত কমিটি গঠন হলেও হয় তার রিপোর্ট জমা পড়েনি, নয়ত রিপোর্টের সুপারিশ মানা হয়নি। গত দশ বছরে নিগমের সব ডিপো মিলিয়ে এমন অভিযোগের সংখ্যা দেড়শোরও বেশি বলে দাবি। নিগমের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, সবক্ষেত্রেই প্রভাবশালী ইউনিয়ন নেতাদের নির্দেশেই কড়া পদক্ষেপ করা যায়নি। কড়া পদক্ষেপ হলে অন্তত ভবিষ্যতে আর্থিক অনিয়মের ফাকফোকড় বন্ধ করা যেত বলে সংস্থার কর্তাদের দাবি। তবে মন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিলেও ইউনিয়নের দাপাদাপি কতটা বন্ধ করা যাবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।