বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
ভোট শেষ হতেই গণনা কেন্দ্রের পাহারায় চৌকিদারের ভূমিকা নিতে দলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে শুরু করে সাংসদ ও বিধায়কদের আহ্বান জানালেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগে ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার জেলার একাধিক জায়গায় জনসভা থেকে এই আহ্বান জানান তিনি। অতি সম্প্রতি ডুয়ার্সের ক্রান্তিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাদারিহাট সংলগ্ন ফালাকাটায় সভা করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার এক দিনেই শুভেন্দু অবশ্য শুধু মাত্র ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার জেলাতেই তিনটি সভা করেন। বীরপাড়া ছাড়াও যে তালিকায় ছিল কালচিনি ও কুমারগ্রাম।
বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছেন, আলিপুরদুয়ার জেলায় শুভেন্দুর তিনটি সভায় মানুষের ভিড় তাঁদের প্রত্যাশা ছাপিয়ে গিয়েছে। দলের জেলা সভাপতি ভূষণ মোদক বলেন, “বীরপাড়ায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতার প্রথম সভায় এ দিন পাঁচ-ছয় হাজার মানুষের জমায়েত হয়। কালচিনিতে সেই সংখ্যাটা ছিল প্রায় ন’হাজার। আর কুমারগ্রামের ভিড় কালচিনির ভিড়কেও ছাপিয়ে গিয়েছে।” তবে কি গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের সাফল্যের জেরে চা বলয় অধ্যুষিত ডুয়ার্সকে এ বারের ভোটে একটু বেশিই গুরুত্ব দিচ্ছে গেরুয়া শিবির? তাই এক দিনেই শুভেন্দুর তিনটি সভা?
ফালাকাটার বিধায়ক তথা বিজেপির অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মণ বলেন, “আমাদের দল বরাবরই ডুয়ার্স-সহ উত্তরবঙ্গকে গুরুত্ব দেয়। সে জন্যই এক দিনে আলিপুরদুয়ার জেলায় তিনটি সভা করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। আর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের যুবরাজ ডুয়ার্সে এক দিনে একটি সভা করেই হাঁফিয়ে উঠছেন।” তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান মৃদুল গোস্বামী পাল্টা বলেন, “শুভেন্দু অধিকারীর মতো বিজেপি নেতাদের ভোটের সময়েই ডুয়ার্সে দেখা যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ভোট চাইতে ডুয়ার্সে আসেন না। মানুষের সুখ-দুঃখের কথা জানতে এখানে আসেন। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকও একই কারণে বারবার ডুয়ার্সে ছুটে আসেন। বিজেপি নেতাদের সঙ্গে আমাদের দলনেত্রী বা সাধারণ সম্পাদকের এটাই পার্থক্য। তা ছাড়া জেলায় শুভেন্দুর এ দিনের সব সভাই ফ্লপ হয়েছে।”
বীরপাড়ায় এ দিনের প্রথম সভা থেকেই গত পঞ্চায়েত ভোটের গণনায় আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তোলেন শুভেন্দু। এর পরেই শুভেন্দু বার্তা দেন, এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে সব বুথকে রক্ষা করতে হবে। সেই সঙ্গে বলেন, “গণনাকেন্দ্রে আমাদের কাউন্টিং এজেন্ট থাকবেন। প্রার্থী ও তাঁর ইলেকশন এজেন্ট থাকবেন। ওই ক্যাম্পে আমাদের লোলকে থাকতে হবে। আর যত জন সাংসদ, বিধায়ক ও মন্ত্রী রয়েছেন, তাঁরাও সবাই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে সেই ক্যাম্পের বাইরে চৌকিদারের মতো থাকবেন। সেটা প্রয়োজন। তা না হলে চোর পার্টি (নাম না করে তৃণমূলকে আক্রমণ করে বলেন) ভোট লুট করবে।” আবাস যোজনা-সহ নানা প্রাকল্পে জ্যের প্রাপ্য অর্থ আটকে রাখার অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে শুভেন্দু এ দিন বলেন, “আমরা টাকা আটকাইনি। চুরি আর দুর্নীতি রুখেছি।“
এ দিন কুমারগ্রামের সভা থেকে অভিষেককে নিশানা করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘ভাইপো এবং পুলিশ এক সঙ্গে গরু পাচার করছিল। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে বলে সেটা বন্ধ করেছি। এখানে কয়লা ভাইপো এসেছিল পুলিশ নিয়ে এবং বলেছিল দুর্নীতি প্রমাণ হলে নাকি ফাঁসিতে উঠবে। আর কত প্রমাণ চাই?’’