প্রতীকী ছবি
মালতীর বিয়ে ঠিক হয়েছে। কিন্তু বাঁ হাতের তর্জনী হঠাৎই অসাড় হয়ে যেতে থাকে। আঙুল বেঁকে যায়। চিকিৎসকেরা জানান, কুষ্ঠ হয়েছে। দ্রুত জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালের কুষ্ঠ বিভাগে মালতীর চিকিৎসা শুরু হয়।
প্লাস্টিক সার্জারির পরে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। পরিবারের লোকেরা জানান, বিয়ে হয়েছে। এখন সুস্থ মালতী।
জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কুষ্ঠ বিভাগের প্রধান বিক্রম সিংহ বসুমাতা বলেন, ‘‘শুধু মালতীই নন, এই ধরনের অনেক রোগীরাই চিকিৎসা করে আজ সুস্থ হয়ে উঠেছেন।’’
জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, কুষ্ঠরোগীদের স্বাস্থ্য পরিষেবার কাজে জেলায় ভাল সাড়া মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জেলায় চলতি বছরে সাত মাসে মাত্র ৭৯ জন কুষ্ঠরোগীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১০০ জন। এ ছাড়াও জেলায় পুরোনো ৩৭০ জন কুষ্ঠরোগীদের চিকিৎসা চলছে। এই রোগীদের খুঁজে বের করতে আশা স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে লাগানো হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। কুষ্ঠ রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় প্লাস্টিক সার্জারির ব্যবস্থাও করা হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে।
স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, আর পাঁচটা রোগের মতো এই রোগে আক্রান্তরা সহজে চিকিৎসকদের কাছে আসেন না। পৃথিবীর প্রাচীনতম রোগগুলোর একটি এই রোগ নিয়ে আজও সমাজে কুসংস্কার ও ভূল ধারণা রয়েছে বলে দাবি স্বাস্থ্য দফতরের। এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কুষ্ঠ একটি জীবাণু ঘটিত রোগ। মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি নামে এই জীবাণু পরিচিত। কুষ্ঠ রোগ দু’ধরনের। অসংক্রামক ও সংক্রামক।
সমস্ত সরকারি হাসপাতালেই সম্পূর্ণ বিনা খরচে এই রোগের চিকিৎসা চলছে বলে দাবি স্বাস্থ্য দফতরের। সাধারণত ৬ মাস থেকে এক বছরের চিকিৎসায় এই রোগ সম্পূর্ণ সেরে যায় বলে দাবি স্বাস্থ্য দফতরের ।
জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘জেলায় কুষ্ঠরোগীদের চিকিৎসায় ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। আশা স্বাস্থ্য কর্মীরাও এই রোগীদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন।
এ ছাড়াও প্রতি মাসে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কুষ্ঠরোগীদের চিহ্নিত করতে শিবির বসে। ফি বছরের মতো এ বারেও জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে কুষ্ঠ রোগীদের প্লাস্টিক সার্জারির ব্যবস্থা করা হবে।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা থেকে বিশেষজ্ঞরা এসে এই অপারেশন করেন। গত বছর জলপাইগুড়িতে ২৯ জনের প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়েছিল। এ বছরেও ইতিমধ্যেই অপারেশনের জন্য রোগীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে এই বিশেষ প্লাস্টিক সার্জারি শিবির বসবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। চিকিৎসার পাশাপাশি কুষ্ঠ রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় জুতো, চশমা সহ অন্যান্য সরঞ্জাম স্বাস্থ্য দফতর থেকেই দেওয়া হয়।
এ ছাড়াও রোগীদের অন্যান্য খরচের জন্য আট হাজার টাকা করে দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে বলে দাবি স্বাস্থ্য দফতরের।