দিনমজুরি করে পড়ে সাফল্য

মাঠে দিনমজুরি করে টিউশন খরচ জোগার করতে হয়েছে। কাওকে আবার সংসার টানতে বাবার সঙ্গে কুমোরের কাজে হাত লাগাতে হয়েছে। কেউ প্রতিবন্ধী বাবাকে সামলে টিউশন করে চরম কষ্টের মধ্যেও পড়াশুনা চালিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৬ ০১:৪৬
Share:

সোনার মেয়ে। প্রতিমা রায়।

মাঠে দিনমজুরি করে টিউশন খরচ জোগার করতে হয়েছে। কাওকে আবার সংসার টানতে বাবার সঙ্গে কুমোরের কাজে হাত লাগাতে হয়েছে। কেউ প্রতিবন্ধী বাবাকে সামলে টিউশন করে চরম কষ্টের মধ্যেও পড়াশুনা চালিয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের হতদরিদ্র তিন মেধাবি ছাত্রী জীবন সংগ্রামের কঠিন লড়াইয়ে নেমে সাফল্যকে জয় করেও ভবিষ্যৎ পড়া নিয়ে তাদের জীবনে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। ওই তিন জনের মধ্যে প্রথম জন কুমারগঞ্জ ব্লকের আঙ্গিনাবোরট হাইস্কুলের ছাত্রী প্রতিমা রায় পেয়েছে ৪৪২। দ্বিতীয়জন গঙ্গারামপুর শহরের কাদিহাট বেলবাড়ি হাইস্কুলের ছাত্রী শিপ্রা পালের প্রাপ্ত নম্বর ৪৫৯ এবং বালুরঘাট গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী সুমি কর পেয়েছে ৩৮৬। চরম আর্থিক অভাবকে সঙ্গী করে ওদের পথচলা সহজ ছিল না। ছিল না একাধিক শিক্ষকের কাছে পড়ার সামর্থ্য।

Advertisement

প্রতি পদে বাধা ডিঙিয়ে ওদের এই জয়ের আনন্দে খুশি স্কুলের শিক্ষক থেকে এলাকার বাসিন্দারা। গড়ে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েও দুশ্চিন্তা ওদের তাড়া করেছে চলেছে। অর্থাভাবে ওই তিনজনের ভবিষ্যতে পড়াশুনা প্রশ্ন চিহৃ হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে ওদের অভিভাবকদের কাছে। তাইতো সরকারী সহায়তার কথা বারবার উঠে এসেছে ওদের আত্মীয়দের মুখ থেকে।

কুমারগঞ্জের মোল্লাদিঘির কুঁড়ে ঘরের বাসিন্দা প্রতিমা খুব ছোট বয়েসে বাবাকে হারিয়েছে। অষ্টম শ্রেণীর পড়ুয়া ছোট ছেলে, মেয়ে এবং বৃদ্ধা মাকে নিয়ে প্রতিমার বিধবা মা অঞ্জলিদেবী মুড়ি ভেজে বাজারে বিক্রি করে অতিকষ্টে সংসার চালান। ফলে পড়ার খরচ থেকে টিউশন ফি জোগার করতে কাস্তে কোদাল হাতে নিয়ে অন্যের জমিতে দিনমজুরির কাজ করতে হতো প্রতিমাকে। ওর কথায়, স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্য তো ছিলই। দুজন গৃহশিক্ষক তাকে বিনে পয়সায় পড়িয়েছে। মা অঞ্জলিদেবী বলেন, মেয়েটা কতদিন না খেয়ে স্কুলে গিয়েছে। মিডডেমিলই ছিল ভরসা।

Advertisement

শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে নিয়ে আগামীতে পড়তে চায় প্রতিমা। কিন্তু অর্থকষ্টে তা কী করে সম্ভব, ভেবে পাচ্ছে না কেউ। গঙ্গারামপুরের বেলবাড়ির বাসিন্দা বাবা সুবল রায় বাড়িতে মাটির হাঁড়ি কলসি গ্লাস তৈরি করে কোনও মতে পরিবারের পাঁচ জনের অন্নের সংস্থান করেন। তাই সকালে উঠে শিপ্রা বাবাকে সাহায্য করতে কাজে হাত লাগাতে হয়। প্রধানশিক্ষক পার্থ সরকার বলেন, ‘‘স্কুল থেকে আমরা যতটা পেরেছি সাহায্যে করেছি। তবে আসল লড়াইটা ওকেই দিতে হয়েছে।’’ মা বুলবুলিদেবী বলেন, ‘‘মেয়েটার ইচ্ছে ভূগোল নিয়ে পড়ার। কিন্তু সেটা কী করে সম্ভব বুঝে উঠতে পারছি না।’’

বালুরঘাট শহরের ঢাকাকলোনি এলাকার বাসিন্দা প্রতিবন্ধী স্বপন করের একমাত্র মেয়ে সুমি। স্বপনবাবুর রোজগার বলতে একটি স্কুলের অস্থায়ী গেটম্যানের চাকরির ৩ হাজার টাকা। তাতে মেয়ের পড়াশোনা চালাতে হিমসিম অবস্থা। টিউশনি পড়িয়ে কিছুটা পড়ার খরচ জোগার করতে হতো সুমিকে। দুমুঠো মুড়ি খেয়েই সকাল সন্ধ্যা নিচু ক্লাসের ছাত্র পড়িয়ে রাত জেগে নিজের পড়া করতে হতো।

—নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement