রবিউল ইসলাম
বাবা ছোট গাড়ির চালক। কিন্তু মার্চ মাসে লকডাউন শুরু হতেই যান বাহন বন্ধ হয়ে যায়। কাজ হারান তিনি। পাঁচ জনের সংসারে শুরু হয় অনটন। স্কুল বন্ধ। তাই সংসারের হাল ধরতে প্রতিবেশী রাজমিস্ত্রির সঙ্গে জোগাড়ের কাজ শুরু করে দশম শ্রেণির পড়ুয়া বাড়ির বড় ছেলে। সেই কাজ করতে গিয়েই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হল রবিউল ইসলামের (১৫)।
হরিশ্চন্দ্রপুর থানার অদূরে একটি বাইকের শোরুমের ছাদ ঢালাইয়ের সময় শনিবার বিকেলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। বনসরিয়া এলাকায় বাড়ি রবিউলের। মহেন্দ্রপুর হাইস্কুলে পড়ত সে। রবিবার দেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নাকি পড়ে গিয়ে আঘাত লেগে মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তে জানা যাবে বলে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে রবিউল বড়। বাবা মহম্মদ তসলিম ভাড়ার গাড়ির চালক। বাবার আয়েই কোনও রকমে সংসার চলত। কিন্তু লকডাউনে কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েন তসলিম। ওই সময় স্থানীয় রাজমিস্ত্রি মহম্মদ সানের সঙ্গে কাজ শুরু করে রবিউল। শনিবার হরিশ্চন্দ্রপুরে বাইকের ওই শোরুমে দোতলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। একতলায় দাঁড়িয়ে নীচে বাঁশের খুঁটি লাগাচ্ছিল রবিউল ও কয়েকজন শ্রমিক। তাকে নীচ থেকে বাঁশ ধরিয়ে দিচ্ছিলেন ছোটন দাস নামে এক শ্রমিক। শোরুমের পাশ দিয়ে গিয়েছে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের তার। আচমকা একটি বাঁশ রবিউলের হাত ফস্কে তারে লাগতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নীচে পড়ে যায় সে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ছোটন বলেন, ‘‘আচমকা চোখের সামনে নীচে পড়ে ছটফট করতে করতে নিস্তেজ হয়ে গেল রবিউল।’’মা রুবি বিবি এখন মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। তসলিম বলেন, ‘‘এ দিন বৃষ্টি বলে কাজে যেতে বারণ করেছিলাম। ছাদ ঢালাই থাকায় যেতেই হবে বলেছিল! ছেলেটা এ ভাবে হারিয়ে যাবে ভাবতে পারিনি।’’ মহেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য নীতা দাস বলেন, ‘‘দুঃখজনক ঘটনা। পরিবারটি যাতে সব সাহায্য পায় তা দেখা হবে।’’