বন্ধ-যাপন: জলপাইগুড়ির রাস্তায় ক্রিকেট খেলায় মত্ত বন্ধ-সমর্থনকারী বাম কর্মীরা। ছবি: সন্দীপ পাল ও সৌমিত্র কুণ্ডু
কথা ছিল, বাম-কংগ্রেসের ডাকা বন্ধের বিরোধিতায় তৃণমূল পথে নামবে। বৃহস্পতিবার বনধের সকালে তৃণমূলকে পথে দেখা গেল ঠিকই, তবে মিছিল-স্লোগান ছাড়াই। প্রতিরোধহীন। জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়ি দুই শহরেই জেলা তৃণমূল সভাপতিরা সঙ্গীদের নিয়ে রাস্তায় হেঁটে বললেন, “শহর দেখতে বেরিয়েছিলাম।” বাম-কংগ্রেসের দাবি, এ দিনের বন্ধ সর্বাত্মক। প্রশাসনের দাবি, সব সরকারি অফিস খোলা ছিল। হাজিরাও ছিল স্বাভাবিক। পথে সরকারি বাস চলেছে।
নেই গ্রেফতারি
শিলিগুড়ির রাস্তায় লাল ঝান্ডা দেখিয়ে সরকারি বাস এবং অন্যান্য যানবাহন আটকাতে দেখা গেল বন্ধ সমর্থকদের। দাঁড়িয়ে থেকে দেখল পুলিশও। কিন্তু দিনের শেষে পুলিশ জানাল, শিলিগুড়ি শহরে কোনও গ্রেফতারি নেই। শহরে বাম-কংগ্রেস শ্রমিক সংগঠনগুলির মিছিল বের হয়। বাস-অটোয় সেরকম ভিড় না থাকলেও পতাকা দেখিয়ে আটকানো শুরু হয়। অটো থামিয়ে দু’একজন যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। বিএসএনএল দফতরের গেটে পিকেটিং করে কয়েকজনকে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পোস্ট অফিসে লোক কম বলে অনেকেই এসে ঘুরে যান। অন্যান্য বন্ধে অবরোধকারীদের পুলিশ ভ্যানে তুলে কয়েকঘণ্টার জন্য হলেও থানায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়। এ দিন তাও হয়নি। জলপাইগুড়িতে জেলা আদালতে অবরোধ সরাতে পুলিশের সঙ্গে বন্ধ সমর্থকদের ধাক্কাধাক্কি হয়। পূর্ত অফিস খোলা নিয়েও বন্ধ সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু কোথাও কোনও গ্রেফতারি হয়নি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “বন্ধ স্বতঃস্ফূর্ত এবং সর্বাত্মক। মানুষ নিজেরাই যোগ দিয়েছে। চা বাগান বন্ধ। সরকারি দফতরেও লোক ছিল না।’’ দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি রঞ্জন সরকার বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রীয় নীতির যেমন বিরুদ্ধে, তেমনি বন্ধেরও বিরুদ্ধে। জোর করে বন্ধ করার চেষ্টা হলে তার প্রতিবাদ জানাই।’’
...এবং ক্রিকেট
জলপাইগুড়ির ডিবিসি রোডের সিপিএমের জেলা পার্টি অফিসের সামনে রাস্তা আটকে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা ক্রিকেট খেলছেন। তখন সাড়ে ১১টা। শহর জুড়ে পিকেটিং করে ওঁরা ব্যাট-বল নিয়ে নেমে পড়েন। উদ্দেশ্য, খেলাও হবে এবং খেলাচ্ছলে রাস্তা অবরুদ্ধও থাকবে। দেখাও গেল, এই ক্রিকেটীয় ‘অবরোধে’ গাড়ি-টোটো আটকে গেল। এমন সময়, জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে হেঁটে আসছিলেন। মিছিল না করে, পতাকা ছাড়া, বন্ধ-বিরোধী স্লোগান ছাড়াই হাঁটছিলেন তৃণমূল সমর্থকেরা। বন্ধ সমর্থক ‘ক্রিকেটাররা’ তৃণমূলের প্রতিরোধহীন এগিয়ে আসা দেখে সরে দাঁড়ালেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি-সহ অন্যদের পথ ছেড়ে দিলেন। তাঁরা চলে গেলে ফের ম্যাচ শুরু। শিলিগুড়িতে দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি রঞ্জন সরকারকেও এমন ভাবে স্লোগান ছাড়াই হাঁটতে দেখা গিয়েছে। জেলা সিপিএম সম্পাদক সলিল আচার্য বলেছেন, “মানুষের সাড়ায় সর্বাত্মক বন্ধ হয়েছে।” জেলা বিজেপি সভাপতি বাপি গোস্বামীর কটাক্ষ, “সবটাই বাম-তৃণমূলের গটআপ ম্যাচ। মানুষ সব বুঝেছে।”