—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
চিত্র ১: সোমবার দুপুর ১টা। ইটের পোড়া ঘরগুলি ভেঙে ফেলতে ব্যস্ত নির্মাণ কর্মীরা। তার আশপাশে দোকানগুলিতে থরে-থরে সাজানো রাখি। যদিও মাত্র তিন মাস আগেই দোকানগুলিতে মজুত থাকত বাজি। কার্বাইডের গোডাউন থেকে আগুন বাজির গুদামে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে তিন জনের ঝলসে মৃত্যু হয়। তবে তার পর থেকে বাজি-বাজারের ছবি বদলে গিয়েছে মালদহের ইংরেজবাজার শহরের নেতাজি পুরবাজারে। এটাই ছিল জেলার সব থেকে বড় বাজির পাইকারি বাজার। তবে কী পুজোয় বাজি মিলবে না? এক বিক্রেতা বলেন, “প্রকাশ্যে বিক্রি না হলেও আড়ালে-আবডালে গেলেই বাজি মিলবে।”
চিত্র ২: দশকর্মা দোকানে সাজানো পুজোর সামগ্রী। রাখি, ঝুলন উৎসবের জন্য কেনাকাটা চলছে সেখানে। বাজি আছে, প্রশ্ন শুনেই মাথা তুললেন দোকানদার। এর পরেই তাঁর জবাব, ‘‘একটু অপেক্ষা করতে হবে।’’ পরে তিনি বললেন, ‘‘৩০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা দাম পর্যন্ত বাজি পাবেন। তবে, বাজি নিতে হলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, পুলিশের অভিযানের ভয়ে দোকানের বদলে অন্যত্র বাজি রাখতে হয়।’’ এমনই ছবি উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের মোহনবাটি বাজারের।
চিত্র ৩: বালুরঘাট শহরের বড় বাজারের হরিবাসর গলি। ঘিঞ্জি বাজার জুড়ে একাধিক ছোট, তালাবন্ধ দোকান। সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে এমনই এক বন্ধ ঘর থেকে প্রচুর বাজি উদ্ধার হয়েছিল। বন্ধ দোকানের আড়ালেই কী বাজি বিক্রির কারবার চলছে? প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসেন এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, “ভোট উৎসবেও বাজি ফেটেছে।” বিক্রি না হলে সে বাজি মানুষের হাতে কীভাবে গেল, প্রশ্ন তাঁর।
মালদহ এবং দুই দিনাজপুরে বাজির কোনও কারখানা নেই, দাবি প্রশাসনের। তার পরেও পুজোর মরসুম হোক কিংবা ঘরোয়া অনুষ্ঠান, সর্বত্রই দেখা যায় বাজির ব্যবহার। ব্যবসায়ীদের দাবি, বিহার, ঝাড়খণ্ড কিংবা চেন্নাই থেকে সড়ক পথে বাজির পৌঁছয় জেলাগুলিতে। সেই বাজি দোকানগুলিতে মজুত করে রাখা হয়। কোথাও ঘিঞ্জি বাজার, কোথাও আবার জনবহুল এলাকায় সে বাজি মজুত করে রাখা হয় বলে অভিযোগ।
মে মাসে ইংরেজবাজার শহরের নেতাজি পুরবাজারে কার্বাইডের গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সে আগুন বাজির দোকানে ছড়িয়ে পড়লে আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। আগুনে ঝলসে তিন জনের মৃত্যুরও ঘটনা ঘটেছে। তার পরেও মজুত বাজি নিয়ে প্রশাসনের হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। অভিযোগ, বাজির অবৈধ কারবারের সঙ্গে পুলিশেরও একাংশ জড়িত রয়েছে। পুলিশের তরফে এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তিন জেলার পুলিশ কর্তাদের দাবি, বেআইনি মজুত বাজি ধরতে অভিযান হয়। নজরদারিও জারি রয়েছে। সাধারণ মানুষের দাবি, বাজি নিয়ে এখন থেকে বাজারগুলিতে নজরদারি চালানো উচিত পুলিশ, প্রশাসনের। নইলে গৌড়বঙ্গেও দত্তপুকুর-কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি এড়ানো যাবে না।