গঙ্গারামপুরে হানা দিয়ে আতশবাজি আটক করল পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।
দোকানে সাজানো প্রসাধনী সামগ্রী। শনিবারের দুপুরে ঝিমোচ্ছেন বিক্রেতা। কাঁধে স্কুল ব্যাগ নিয়ে হাজির এক যুবক। আছে নাকি? প্রশ্ন শুনেই গাঝাড়া দিয়ে উঠলেন বিক্রেতা। প্রসাধনী সামগ্রীর বাক্স থেকে আতশবাজি, চকলেট, লঙ্কা বাজি বার করে ভরে দিলেন যুবকের স্কুল ব্যাগে। বাজি কিনে যাওয়ার পথে যুবক বলেন, “শহর থেকে বাজি কিনে গ্রামে বিক্রি করি। এ বারে বাজিতে খুব কড়াকড়ি। তাই গোপনে কিনতে হচ্ছে।”
এ দিন এমনই ছবি দেখা গিয়েছে মালদহের ইংরেজবাজার শহরের চিত্তরঞ্জন পুরবাজারে। বিক্রেতার দাবি, “দুর্গা পুজোর পরেই ঋণ নিয়ে লক্ষাধিক টাকার বাজি কিনেছিলাম। এখন শুনছি আদালতের নির্দেশে শব্দবাজি কেন, কোনও বাজিই বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু এ বারের বাজি বিক্রি করতে না পারলে ঘরে থেকে নষ্ট হবে।” তাই নিরুপায় হয়ে পুলিশের গ্রেফতারের ভয় নিয়েই গোপনে বাজি বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। তাঁর পাশেরই আরও এক বাজি বিক্রেতা বলেন, “দুর্গা পুজোর পরে প্রসাধনী কেনাবেচা কমে যায়। তাই লক্ষ্মী পুজোর পরেই দোকানে বাজির পসরা সাজিয়ে বসে থাকি। এ বারও বাজি কিনে দোকানে পসরা বসিয়েছিলাম। এখন এই মজুত বাজি নিয়ে কী যে করব কিছুই বুঝতে পারছি না।”
এই মজুত বাজি নিয়েই এখন চিন্তায় পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। পুলিশের দাবি, মালদহে বাজির কারখানা নেই। ঝাড়খণ্ড, মুর্শিদাবাদ, কলকাতা থেকে বাজি জেলায় আসে। এ ছাড়া ভিন্ রাজ্য থেকেও বাজি কিনে খোলা বাজারে বিক্রি করেন অনুমোদিত ব্যবসায়ীরা। মালদহে স্থায়ী বাজির বাজার নেই। তবে ইংরেজবাজার শহরের চিত্তরঞ্জন পুরবাজার, বিচিত্রা মার্কেটে অনুমোদিত শতাধিক ব্যবসায়ী বাজির পসরা সাজিয়ে বসেন। দুর্গা পুজো থেকেই দোকানে দোকানে মজুত হয়ে যায় বাজি। বড় দোকানগুলিতে লক্ষাধিক টাকার বাজি মজুত করা হয়। করোনা-আবহে এ বারে আতশবাজি ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে হাইকোর্ট। রাজ্য সরকারের তরফেও জেলার পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের বাজি ব্যবহার নিয়ে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ তৎপর হয়েছে।
গত, শুক্রবার শহরের একাধিক দোকানে ক্রেতা সেজে হানা দিয়ে পুলিশ প্রচুর পরিমাণে বাজি বাজেয়াপ্ত করেছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, “অভিযানে গিয়ে দেখা যাচ্ছে কেউ আনাজ, কেউ আবার প্রসাধনী, খাবারের দোকানের আড়ালে বাজি বিক্রি করছেন। তাঁদের খুঁজে বাজি বাজেয়াপ্ত করাই এখন আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ।”
যদিও বাজারগুলিতে লাগাতার অভিযান এবং সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হবে বলে জানিয়েছেন মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। তিনি বলেন, “আমাদের অভিযান চলছে। আইনি পদক্ষেপও করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সচেতন হতে হবে মানুষকেও। মানুষকে সচেতন করার কাজও চলছে।”