Power Theft

কার্ড-পতাকা দেখিয়ে বিদ্যুতের বিলে ‘ফাঁকি’

চুক্তি মোতাবেক কোচবিহার ভারতের একটি রাজ্য, সেটি কী করে পশ্চিবঙ্গের একটি জেলা হল, সেটা আমরা সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছি।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৩ ০৯:৪৯
Share:

বিল ‘এড়াতে’ পতাকা। নিজস্ব চিত্র।

বিদ্যুতের মিটারের পাশে বাঁধা ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন’-এর (জিসিপিএ) একটি হলুদ পতাকা, মিটার বক্সের পেছনে গোঁজা গ্রেটারের একটি পুরোনো কর্মসূচির একটি কার্ড। জলপাইগুড়ি শহরের কিছু বাড়ি এবং লাগোয়া পোড়াপাড়া, বেরুবাড়ি, মালকানির বহু বাড়ির বিদ্যুতের মিটারবক্সের আশেপাশে এমন পতাকা, কার্ডের দেখা মিলছে। অভিযোগ, এই পতাকা এবং কার্ড-ই হল বিদ্যুতের বিল না দেওয়ার ‘ছাড়পত্র।’ জলপাইগুড়ি শহর ঘেঁষা পোড়াপাড়ার একটি বাড়িতে দেখা গেল এমনই পতাকা। গৃহকর্তা সুরজিত সূত্রধর বললেন, “আমাদের এই পতাকা আর কার্ড আছে। বিদ্যুতের বিল দিই না। এক বার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিল বিদ্যুৎ দফতর। দলের লোকেরা আবার তার জুড়ে দিয়েছে।” বিদ্যুতের বিল না দেওয়ার এই ‘ছাড়পত্র’ বাড়ি-বাড়ি বিলিয়েছে ‘জিসিপিএ’। জলপাইগুড়িতে দিন-দিন বিল ‘ফাঁকি’ দেওয়া এমন গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে বলে দাবি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার।

Advertisement

কিছুটা দূরে বাড়ি শচীন কর্মকারের। তাঁর স্ত্রী হেমদিনী বলেন, “আমাদের বিল দিতে হয় না। আমাদের বলা আছে, বিল বকেয়া রয়েছে বলে বিদ্যুৎ দফতরের কোনও কর্মী যদি সংযোগ কাটতে আসেন, তা হলে তাঁকে হলুদ পতাকা ও কার্ড দেখাতে।’’ বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রের দাবি, জলপাইগুড়ি শহর এবং লাগোয়া এলাকায় ‘গ্রেটারের’ পতাকা এবং কার্ড সাঁটা বাড়ির বকেয়া থাকা বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ৮০ লাখ ছাড়িয়েছে।

যে কার্ডটি মিটার বক্সের আশেপাশে রাখতে বলা হয়, তাতে ‘গ্রেটার’ নেতা বংশীবদন বর্মণের ছবি রয়েছে। কার্ডটি আদতে গত ৫ ফেব্রুয়াররিতে কোচবিহারের বালিয়ামিরে গ্রেটারের একটি কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার ‘প্রতিনিধি’ পরিচয় পত্র। সূত্রের দাবি, গ্রেটারের সমর্থক হওয়ার প্রমাণপত্র হিসাবে দেওয়া হয়েছে কার্ডটি। বংশীবদন বৃহস্পতিবার বলেন, “বিদ্যুতের বিল দেওয়া স্থগিত রেখে। চুক্তি মোতাবেক কোচবিহার ভারতের একটি রাজ্য, সেটি কী করে পশ্চিবঙ্গের একটি জেলা হল, সেটা আমরা সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছি। সেটা যে দিন জানাতে পারবে, সে দিন সব বিল দিয়ে দেব। আপাতত বিল স্থগিত।” জলপাইগুড়ি জেলায় গ্রেটারের পতাকা লাগিয়ে নতুন করে বিল বকেয়া রাখার প্রবণতা প্রসঙ্গে বংশীবদন বলেন, “বৃহত্তর কোচবিহারের মধ্যে উত্তরবঙ্গের পুরোটাই চলে আসে।”

Advertisement

বেরুবাড়ি এবং শহর লাগোয়া পান্ডাপাড়া এলাকায় একাধিক বার বিল বকেয়া রাখা গ্রেটার সমর্থকদের বিদ্যুৎ সংযোগ কাটা হলেও ফের তাঁরা জুড়ে নিয়েছেন বলে দাবি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রের। যে সব এলাকায় পাশাপাশি কয়েক ঘর গ্রেটার সমর্থক রয়েছেন, সেখানে বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা গেলে, মহিলারা ঘেরাও করে আটকে রাখছেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, বিল না মিটিয়ে ওই মিটার থেকে ইচ্ছে মতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। টোটোর ব্যাটারি রি-চার্জ করা থেকে শুরু করে নানা রকমের পাম্প চালানো চলছে। ট্রান্সফর্মারের উপরে চাপ বেড়ে স্বাভাবিক পরিষেবাও ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “সমস্যা হল, এলাকার কাউকে দিনের পর দিন বিল না দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে দেখে, আশেপাশের অনেক পরিবারও নিজেদের বাড়িতে গ্রেটারের পতাকা লাগিয়ে দিচ্ছে।”

বিদ্যুৎ পর্ষদ সূত্রের দাবি, বড় মাপের অভিযান করার জন্য প্রশাসনের প্রয়োজনীয় অনুমতিও মেলেনি। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে উপর থেকে এখনও ছাড়পত্র মেলেনি।” জলপাইগুড়ির বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আঞ্চলিক আধিকারিক (আরএম) সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, “প্রশাসনিক ব্যবস্থা হচ্ছে। লোকজনকে বোঝানো হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। তার পরেও কেউ লাইন জুড়ে দিলে, মামলা হচ্ছে। আমরা যতটা পারছি, অভিযান করছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement