যিনি খেলেন তিনি প্রতিমাও গড়েন

হোয়াটস অ্যাপের ‘ডিপি’তে সেলফি তোলার মুহূর্তের ছবি। ফেসবুকের প্রোফাইল ছবিতে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র তেরঙ্গা জাল, ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ ছবিতে ব্যাডমিন্টনের কর্ক। তিনি ব্যাডমিন্টন কোচ, তিনি মৃৎশিল্পীও।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৫৮
Share:

কুমোরটুলিতে প্রতিমা রং করছেন সৌরভ পাল। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

হোয়াটস অ্যাপের ‘ডিপি’তে সেলফি তোলার মুহূর্তের ছবি। ফেসবুকের প্রোফাইল ছবিতে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র তেরঙ্গা জাল, ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ ছবিতে ব্যাডমিন্টনের কর্ক। তিনি ব্যাডমিন্টন কোচ, তিনি মৃৎশিল্পীও।

Advertisement

রেলের কোচিং ক্লাসে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে র‌্যাকেট ধরতে শেখান, তিনি কুমোরটুলিতে এসে হাতে তুলি নিয়ে দুর্গা প্রতিমার মুখে রং বুলিয়ে দেন। তুলি থেকে রং গড়িয়ে হাতে-জামায় ছড়িয়ে পড়ে। কুমোরটুলির বিভিন্ন স্টুডিওতে পরবর্তী প্রজন্ম মূর্তি গড়ার কাজে আসছে না বলে হতাশা আক্ষেপের মাঝে সৌরভ ব্যাতিক্রম।

মৃৎশিল্পী সুদেব পালের ছেলে সৌরভ ব্যাডমিন্টনে রাজ্য স্তরের খেলোয়াড়। জাতীয়স্তরের ব্যাডমিন্টন খেলতে একবার রাঁচি গিয়েছিল সৌরভ। গত বছর বাংলায় সাম্মানিক নিয়ে স্নাতক হয়েছেন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে বাবাকে সাহায্য করতে মূর্তিতে রং করেন, এখনও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি। সৌরভের কথায়, ‘‘জাতীয় স্তরে ব্যাডমিন্টন খেলতে চাই। পারিবারিক পেশাও চালিয়ে যেতে চাই।’’

Advertisement

শাহরুখ খানের ‘এসআরকে’র মতো ফেসবুকে নিজের নামের পাশে এসআরভি লিখেছেন সৌরভ। হাল ফ্যাশানের একটি বাইকও রয়েছে তাঁর। সৌরভের মা জানালেন, বাবাকে সাহায্য করতে ছোটবেলায় শিলিগুড়িতে কুমোরটুলিতে যেত। তারপর থেকে সেটাই অভ্যেস করে নিয়েছেন সৌরভ। উচ্চমাধ্যমিক বা স্নাতকস্তরের পরীক্ষার বছরেও পুজোর আগের মাসখানেক কুমোরটুলিতেই সময় বেশি দিতে হয়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্কুল, ব্যাডমিন্টন ক্লাস, টিউশন সেরে সন্ধ্যেবেলায় ঢুকে পড়তেন কুমোরটুলি পাড়ায় নিজেদের স্টুডিওতে। পোয়াল বাঁধা বা মাটির কাজে পটু নন সৌরভ। ছোট থেকেই রঙের কাজই তাঁকে টানে। রবিবার দুপুরেও হলুদ রঙে ব্রাশ চুপিয়ে প্রতিমায় লেপে দিতেই ব্যস্ত ছিলেন। ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই রং-ব্রাশ হাতে। বললেন, ‘‘হাতে আর বেশি সময় নেই, সবে রঙের কাজ শুরু হয়েছে। তাই ব্যস্ততা বেশি।’’

দেবীর চক্ষুদান থেকে শুরু করে রঙের সূক্ষ্ম কাজ সবই সৌরভ পারেন। প্রতিমা ভিন রাজ্যে পাঠানোরও স্বপ্ন দেখেন। সুঠাম চেহারার ট্রিম করা খোঁচা দাড়ির সৌরভ দুর্গা প্রতিমার মধ্যে রঙের বৈচিত্র্য নিয়েও ভবিষ্যতে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে চান। তাতে সায় রয়েছে বাবারও। সুদেববাবু বললেন, ‘‘আমাদের কাজ খুব খাটনির। পুজোর আগে দু’তিন মাস দম ফেলার ফুরসত থাকে না। সৌরভকে একটা কথা বলেছি, কাজের সময় নিয়ে কোনও আপস নেই। ও সেটা মেনেও চলে।’’

সুদেববাবুর স্টুডিওতে অন্তত ১৫টি প্রতিমার কাজ চলছে। সব প্রতিমা রঙের দায়িত্ব সৌরভের। তবে সহযোগিতার জন্য কারিগরও রয়েছে। কখনও ব্লোয়ার দিয়ে কখনও বা ব্রাশ দিয়ে রং করতে হয়। সৌরভের মা পুষ্পাদেবীর কথায়, ‘‘আজকালকার ছেলারা তো এই পেশায় আসতে চায় না। বাপ-ঠাকুর্দা মূর্তির কাজ করলেও, ছেলেরা মাটির কাজ করতে চায় না। সে দিক দিয়ে সৌরভ কিন্তু ব্যতিক্রম। ছোট বেলায় আমরাই ওকে কুমোরটুলিতে এনেছিলাম। এখন নিজেই আসে।’’

রবিবার সকাল থেকে সাবেকি ধাঁচের একটি বড় দুর্গা প্রতিমার রঙের কাজ শুরু করেছেন সৌরভ। রং শেষ হলে, প্রতিমার ছবিটাকেই কিছুদিনের জন্য, হোয়াটস অ্যাপের ‘ডিপি’ করবেন বলে ভেবে রেখেছেন সৌরভ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement