ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লার বাড়ি নিয়ে অভিযোগ তুলেছে বিরোধী তৃণমূল। এ বার বাড়ির অন্দরের সাজসজ্জা নিয়ে কানাঘুষো শুরু হয়েছে মন্ত্রীর দলের অন্দরেই। যার উত্তরে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বার্লা জানান, তিনি তাঁর নিজের জায়গায় ঠিক আছেন। আর মানুষ সেটা জানেন।
সরকারি লিজের জমি ‘দখল’ করে লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানের ভিতরে জন বার্লা যে তিন তলা বাড়ি তৈরি করেছেন, তার অন্দরে রয়েছে নানা বিলাস-সামগ্রী, দাবি বিজেপি নেতা-কর্মীদেরই একাংশের। সাদা মার্বেল দিয়ে সাজানো হয়েছে বাড়ির সবকটি ঘর। রয়েছে দামী কাঠ এবং কাঁচের আসবাব, আয়না। আধুনিক স্বয়ংক্রিয় বিলাসবহুল চেয়ার রয়েছে জন বার্লার বাড়িতে। যার এক একটির দাম প্রায় দেড় লক্ষ টাকার কাছাকাছি। সেই চেয়ারে বসে এসেছেন বিজেপির এমন কেন্দ্র বা রাজ্য নেতার সংখ্যাও নেহাত কম নয়, বলে দাবি দলের একাংশের। বার্লার বাড়ির বিছানার পাশ দিয়ে রয়েছে এলইডি আলো। দেওয়ালে প্রমাণ সাইজের এলইডি স্ক্রিনওয়ালা টিভি এবং বাড়ির দরজায় লাগানো রয়েছে সেন্সর। তাতে অবাঞ্ছিত স্পর্শ হলেই সাইরেন বাজতে থাকে বলে দাবি। বাড়ির কয়েকটি দরজার তালা রিমোটের মাধ্যমে খোলা-বন্ধ হয় বলেও দাবি। বিজেপির কর্মীদের দাবি, এর কোনটাই বাড়িতে রাখা বেআইনি নয়। তবে বিজেপি নেতাদের একাংশের প্রশ্ন, চা শ্রমিক নেতার বাড়িতে এমন বিলাসবহুল সরঞ্জাম থাকাটা বেমানান। প্রশ্ন ওঠে, অর্থের উৎস নিয়েও।
এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বার্লা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘একটি পার্টি অফিস তৈরির ইচ্ছে অনেকদিন ধরেই আমার ছিল। ২০০৮-০৯ সালে একজন সেজন্য ওই জমিটি দেয়। সেখানে ভবনটি তৈরি করি। ওই এলাকায় সবটাই খাস জমি। তার উপরেই একের পর-এক নির্মাণ তৈরি হয়েছে। কারও জমির দলিল নেই। কিন্তু সবার মতো আমিও গ্রাম পঞ্চায়েতকে কর দিই। বিদ্যুতের বিল দিই। আসলে আদিবাসী সমাজ থেকে উঠে আমি মন্ত্রী হয়ে গিয়েছি দেখে সবাই রাজনীতি করছেন। সেজন্য ওই এলাকায় আরও যারা বিভিন্ন নির্মাণ করেছেন, তাঁরাও ভয় পাচ্ছেন।”
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে বাড়ি তৈরি শুরু করেছিলেন জন। সরকারি লিজে থাকা চা বাগানে বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া একটি ইটও গাঁথা যায় না। সে ক্ষেত্রে আলিপুরদুয়ারের সাংসদ কী ভাবে তিন তলা বাড়ি তৈরি করলেন? কেন আপত্তি করল না চা বাগান কর্তৃপক্ষ? এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি বাগান কর্তৃপক্ষ এবং চা মালিকদের সংগঠন। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বাড়ি তৈরি হলেও কেন আপত্তি করেনি জেলা প্রশাসন? প্রশাসনের দাবি, বিষয়টি তাঁদের নজরে আসেনি। অভিযোগ পাওয়া মাত্র পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে দাবি প্রশাসনের।
বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, “জন বার্লার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলোর কথা বলা হচ্ছে, এমন অনেক অভিযোগ তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে। যদি জন বার্লার বিরুদ্ধে এমন কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, সেটা পার্টির পক্ষ থেকে আমরা খোঁজ-খবর করব।” বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর পাল্টা প্রশ্ন, “জন বার্লা মন্ত্রী হওয়ার পরে এই সব প্রশ্ন কেন তোলা হচ্ছে, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়াটা তৃণমূল মেনে নিতে পারছে না।”