শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবের সামাজিক মাধ্যমে লেখা নিয়ে নানা গুঞ্জন। — ফাইল চিত্র।
আবেগ, আঘাত, প্রাপ্তি, সাফল্য ও ব্যর্থতা— এমন একাধিক বিশেষ শব্দে সাজানো ১২ লাইনের মনের কথা, ‘পাঁচ দশক’। রবিবার সাতসকালে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবের সামাজিক মাধ্যমে এই লেখা নিয়ে নানা গুঞ্জন, আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, প্রায় ৫০ বছর রাজনীতির কথা বলতে গিয়ে অভিমানের সুর গৌতমের গলায়। দু’দফায় রাজ্যের পূর্ণমন্ত্রী, মেয়র, বিরোধী দলনেতা— অনেক কিছুই তিনি হয়েছেন। তা হলে আজ এমন কথা কেন?
গৌতম অনুগামীদের বক্তব্য, ছাত্রজীবন থেকে দক্ষিণপন্থী রাজনীতি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রথম দিন থেকে শুরু করে জীবনের একটা প্রান্তে এসে এটা হয়তো তাঁর নিজস্ব উপলব্ধি। বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে থেকেছেন তিনি। মেয়র হিসাবে সাধ্যমতো কাজ করছেন। তবে এরই মধ্যে গত শুক্রবার এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান পদে তাঁর নাম ঘোষণার কয়েক ঘন্টার মধ্যে আবার তা বদল হওয়ায় ‘অসম্মানিত’ বোধ করেছেন তিনি। হয়তো খানিকটা অভিমানীও হয়েছেন তিনি। রাজ্য স্তরে কারও বিরুদ্ধে কিছু না বললেও, নিজের মনের কথা ওই ‘পাঁচ দশক’ লেখায় বোঝাতে চেয়েছেন। ওই পদে যাঁকে বসানো হয়েছে, তিনি গৌতমের চেয়ে বয়স বা রাজনীতিতে শুধু নন, প্রশাসনিক দিক দিয়েও অনেক নবীন। অনেক পরে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এসেছেন তিনি। মেয়র অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘এটা নিজের উপলব্ধি মাত্র। আর কিছু নয়।’’
দলীয় সূত্রের খবর, তৃণমূলে গৌতম নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তাই দলের উত্তরবঙ্গ থেকে এক মাত্র জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য, প্রথম উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী, পুরসভা ভোটের ফল পুরো বেরনোর আগেই মেয়র হিসাবে গৌতমের নাম নেত্রীই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর শাখা সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’ তাঁর হাত ধরেই তৈরি হয়েছে। আপাতত মেয়র পদ সামাল দিলেও বাড়তি এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান পদ পেয়ে খুশিই হয়েছিলেন। যদিও, ওই পদে তিনি আগেও ছিলেন। কিন্তু, এখন পুরসভা এবং এসজেডিএ মিলিয়ে শিলিগুড়ি শহর এবং সংলগ্ন এলাকায় উন্নয়ন ভাল ভাবে করা সম্ভব, তা তিনি জানতেন। কিন্তু দলের ‘উপরমহলে’র সিদ্ধান্তে তা হয়নি বলে খবর। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির লোককেই পদে রাখার যুক্তিতেই তাঁর নাম বাদ পড়ে বলে শোনা যাচ্ছে।
শিলিগুড়ির, জলপাইগুড়ির মতো শহরের একাংশ মানুষ কিন্তু এটা ভাল ভাবে নেননি। অনেকেই বলেছেন, যা ছিল তাই রয়েছে। মাঝখানে কয়েকঘন্টার জন্য কেন মেয়রের নাম ঘোষণা করে তাঁকে অপমানিত করা হল, প্রশ্ন তাঁদের। ৫০ বছরের রাজনীতি করে তাঁর কি এটাই পাওনা ছিল? আবার কেউ কেউ বলছেন, রাজনীতি মানেই ঘাত-প্রতিঘাত। লড়াই করেই টিকে থাকতে হয়। তাই হয়তো মেয়রও লিখেছেন, ‘সাফল্য-ব্যর্থতার সাপ লুডো খেলায় আবেগ আজ ছুঁলেওআর নাড়া দেয় না।’