দুশ্চিন্তা: উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের পথে শিশুকে নিয়ে। নিজস্ব চিত্র।
পুজোর বাজার থেকে শুরু করে পুজো এবং তার পরে বিসর্জন, মাত্রা ছাড়া ভিড় সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এই অবস্থায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছে খোদ স্বাস্থ্য দফতরই। কিন্তু সংক্রমণের মাত্রা কতটা বাড়ল, তার হিসাব রাখতে প্রয়োজনীয় নমুনা পরীক্ষা এখনও শুরু হয়নি উত্তরবঙ্গের কোথাও। বিশেষ করে আরটিপিসিআর পরীক্ষা তো জেলাগুলিতে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। শুধু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ভাইরাল রিসার্চ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিতেই দৈনিক আড়াই হাজার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। সেখানে এখন দিনে ২০০-৩০০-এর বেশির নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না। একই পরিস্থিতি উত্তরের অন্য জেলাগুলিতেও। পরিস্থিতি দেখে প্রশ্ন উঠেছে, পরীক্ষা যদি কমে যায় তা হলে সংক্রমণ বাড়ছে কি না, সেটা ধরা পড়বে কী ভাবে?
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ভিআরডিএলের আধিকারিক শান্তনু হাজরা বলেন, ‘‘এই সময় বেশি করে নমুনা পরীক্ষা না হলে সংক্রমণের পরিস্থিতি আঁচ করা যাবে না। সংক্রমণ ঠেকাতে কনট্র্যাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজ সঠিক ভাবে হবে না। তাতে বিপদ বাড়বে। তাই দ্রুত নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।’’ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ভিআরডিএলে দৈনিক ২০০-৩০০ লালারস নমুনার আরটিপিসিআর পরীক্ষা হচ্ছে। আলিপুরদুয়ারে ১৫০, কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে বড় জোর ৩০০। মালদহ, রায়গঞ্জ মেডিক্যালে একই চিত্র।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরগুলির দাবি, তারা নমুনা পরীক্ষা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিক বলেন, ‘‘গড়ে রোজই প্রায় ৬০০ জনের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে জেলায়। পরীক্ষা আরও বাড়াতে বলা হচ্ছে।’’ পুজোর দিন কয়েক আগেও কোচবিহারে প্রতিদিন করোনা পরীক্ষা করা হত আড়াই থেকে তিন হাজার জনের। পুজোর সময়ে সেই হার অনেকটাই কমে আসে। যেখানে পুজোর পরে তৃতীয় ঢেউয়ের হানার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, সেখানে করোনা পরীক্ষার হার কেন কমিয়ে দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কোচবিহারের সিএমওএইচ সুকান্ত বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘‘পরীক্ষার হার কোনও ভাবেই কমানো হবে না।’’ মালদহে আরটিপিসিআর ও র্যা পিড অ্যান্টিজেন মিলিয়ে দৈনিক ৩৫০-৪০০ নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। যা আগে দ্বিগুণ ছিল। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, দ্রুত করোনা পরীক্ষা বাড়ানো হচ্ছে। আলিপুরদুয়ারের সিএমওএইচ গিরীশচন্দ্র বেরাও একই কথা জানান।
উদ্বিগ্ন লোকজনের বক্তব্য, দ্রুত পরীক্ষা না বাড়ালে সংক্রমণ কতটা বাড়ল, সেটা ধরা পড়বে না। তাতে সংক্রমণ হু হু করে বাড়ার আশঙ্কা। এবং এ বারে সব থেকে বিপদ বাড়ির ছোটদের। কারণ, ১৮ বছরের কম বয়সিদের এখনও টিকা দেওয়া শুরু হয়নি।