দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিকানের এক্সপ্রেস। ফাইল চিত্র
দুর্ঘটনার দিন বিকানের এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনের নীচ থেকে আগুনের ফুলকি দেখতে পাওয়া নিয়ে কর্তব্যরত রেলকর্মী এবং চালকের কথাবার্তা হয়েছিল বলে দাবি। রেলকর্মীদের মধ্যে সমাজমাধ্যমে চালাচালি হওয়া একটি অডিয়োয় (আনন্দবাজার এটির সত্যতা যাচাই করেনি) সেই কথোপকথন শোনা গিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
ছড়িয়ে পড়া সেই অডিয়োয় শোনা গিয়েছে, দোমোহনীর আগে কোনও একটি স্টেশনের মাস্টার (রেলকর্মীদের একাংশের দাবি, জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনের) নির্দিষ্ট কোনও একটি ট্রেনের ইঞ্জিনের নীচে কোথাও আগুনের ফুলকি বেরোতে দেখা গিয়েছে বলে বিভিন্ন গেটম্যানকে (সম্ভবত ফোনে) সতর্ক করছেন। আবার কোনও এক গেটম্যানকে বলতে শোনা যায়, ট্রেন চলে গেলেও আগুনের ফুলকি তিনি দেখতে পাননি। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিকানের এক্সপ্রেসের চালকের সঙ্গেও আগুনের ফুলকি দেখতে পাওয়া অথবা না পাওয়া নিয়ে রেলকর্মীদের কথা শোনা গিয়েছে অডিয়োয়। গত ১৩ জানুয়ারি দোমোহনীতে লাইনচ্যূত হয়েছিল বিকানের এক্সপ্রেস। মৃত্যু হয়েছিল ৯ জনের, জখম ছিলেন শতাধিক। ইঞ্জিনের একটি যন্ত্রাংশ ভেঙে যাওয়াতেই দুর্ঘটনা হয়েছিল, বলে প্রাথমিক ভাবে তদন্তে রেল জেনেছে।
অডিয়ো টেপে শোনা যাচ্ছে, একজন রেলকর্মী গেটম্যানকে বলছেন, ‘সতেরো, (রেলগেটের নম্বর) এটার (বিকানের এক্সপ্রেসের) বোধ হয় হেভি স্পার্কিং (আগুনের ফুলকি) আছে। দেখে সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট করতে হবে।” একই সর্তকর্তা আরও কয়েকটি গেটের দায়িত্বরত কর্মীকে দেওয়া হয়। অডিয়োয় শোনা যাচ্ছে, একটি গেটের রেলকর্মীকে বলা হচ্ছে, ‘রানিনগর রিপোর্ট করেছে, আগুনের ফুলকি দেখা যাচ্ছে।’ কিছুক্ষণ পরে সেই টেপেই শোনা যাচ্ছে এক রেলকর্মী বলছেন, ‘কই, দেখা গেল না তো!’ এর পরে ট্রেনের চালকের সঙ্গে এক রেলকর্মীর কথা হয়। সেখানে রেলকর্মী চালককে বলেন, ‘গাড়িতে আগুনের ফুলকি দেখা যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আমার গেটম্যান বলেছে, কিছু দেখা যায়নি। তাই আমি সিগন্যাল দিচ্ছি, আপনি আসতে থাকুন।’ সে কথা শুনে চালক বলেন, ‘শুনুন মাস্টারসাহেব (স্টেশন মাস্টার), ওই জায়গায় ব্রেক কষা হয়েছিল। হতে পারে সেখান থেকেও ঝলকানি দেখা গিয়েছে।’ এর পরে চালককে সেই ব্যক্তি
বলেন, ‘আঠেরো নম্বর গেটেও কর্মী আছে, দেখে নেবে। আপনি আসতে থাকুন।’
দোমোহনীর দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর ঢের আগে থেকে বিকানের এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনের নীচ থেকে আগুন য়ে সত্যিই দেখা গিয়েল তা প্রাথমিক তদন্তে ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে। রানিনগর থেকেই লাইনের মাঝে থাকা একাধিক স্লিপার এবং কংক্রিটের পাটাতনে ক্ষতচিহ্ন মিলেছে। ইঞ্জিনের ভেঙে পড়া যন্ত্রাংশের সঙ্গে সেগুলির সংঘর্ষ হয়েছিল বলে দাবি। অডিয়ো টেপের সূত্র ধরে রেলকর্মীদের একাংশ দাবি করেছেন, আগুন দেখা নিয়ে কর্মী-চালক সকলের কথা হলেও দুর্ঘটনা রোখা যায়নি।
প্রশ্ন উঠেছে, এই অডিয়ো বাইরে বেরোল কী করে। রেলের নিজস্ব ফোন নেটওয়ার্কে কথোপকথন রেকর্ড হয়। সেই রেকর্ড ডিভিশন বা জ়োনের সদরে থাকে। রেলকর্মীদের একাংশের দাবি, তদন্তের জন্য হয়তো সেই রেকর্ডিং বের করা হয়েছিল। কোনও কারণে সেটি বাইরে ফাঁস হয়ে গিয়েছে। এক রেল আধিকারিকের কথায়, “তদন্তের স্বার্থে যা যা তথ্য নেওয়ার সবই জোগাড় করা হয়েছে। কার বা কাদের গাফিলতি তাও জানা গিয়েছে। সংবাদমাধ্যমে এই অডিয়ো দিয়ে কেউ কাউকে আড়াল করতে পারবেন না।”