বাণেশ্বরের ‘পুরনো বাসিন্দাদের’ রক্ষায় এ বার মোহন সুরক্ষা কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু করল কোচবিহার প্রশাসন। শুক্রবার এ নিয়ে কোচবিহারের পুন্ডিবাড়ি বিডিও অফিসে বৈঠক করেন কোচবিহারের সদর মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল। বৈঠকে বন, পুলিশ কর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদের সদস্যেরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও বাণেশ্বরে ওয়াচ টাওয়ার তৈরি, শিবদিঘি লাগোয়া এলাকায় নাইট ভিশন ক্যামেরা বসানো, স্থায়ী বনকর্মীকে এলাকায় নজরদারি চালানোর মতো নানা ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি, নাম গোপন রেখে মোহনদের গতিবিধির খবর জানাতে কিছু সরকারি কর্মী, বন কর্তাদের মোবাইল নম্বর দিয়ে এলাকায় সাইন বোর্ডও দেওয়া হবে। ১০ মার্চ সুরক্ষা কমিটি গঠনের ব্যাপারে বাণেশ্বরে বাসিন্দাদের নিয়েও বৈঠক করা হবে।
কোচবিহারের সদর মহকুমাশাসক বলেন, “মোহনদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ব্যাপারে বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ফের বৈঠক করে বাসিন্দাদের যুক্ত করে মোহন সুরক্ষা কমিটি গঠনের কাজও হবে।”
কোচবিহারের বাণেশ্বর এলাকা বিরল প্রজাতির প্রচুর কাছিমের পুরনো ডেরা বলে পরিচিত। এলাকার বাসিন্দারা ওই কাছিমদের ‘মোহন’ বলেই ডাকেন। রাজ আমলে তৈরি বাণেশ্বর শিবমন্দিরের লাগোয়া দিঘিতে ওই প্রাণীদের দেখার টানে প্রচুর পর্যটক ছুটে যান। ওই দিঘি ছাড়াও এলাকার অন্য একাধিক জলাশয়েও প্রচুর মোহন রয়েছে। তাই ওই এলাকাকে জীব বৈচিত্র্যের হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণায় উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। তার পরেও ওই এলাকা থেকে বিরল প্রজাতির কাছিম পাচারে একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার ব্যাগে ‘মোহন’ নিয়ে এক যুবক হাতেনাতে ধরা পড়ায় ওই সন্দেহ আরও গাঢ় হয়েছে।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ও বন কর্তাদের কাছে খবর, বিরল প্রজাতির কাছিমটি তুফানগঞ্জের মারুগঞ্জে পাঠানোর কথা ছিল। ওই ঘটনায় ধৃতের দাবিও তেমনই। তাছাড়া ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়েও আগে সেখানে কাছিম মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। সব মিলিয়েই মোহনদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। যার জেরে তৎপরতা বাড়ে প্রশাসনের। কোচবিহার জেলা পরিষদের সদস্য, বাণেশ্বরের বাসিন্দা পরিমল বর্মণ জানান, স্থানীয় মানুষ মোহনদের দেবতা জ্ঞানে পুজো করেন। তাই মোহন নিয়ে ওই যুবক ধরা পড়ায় আমাদেরও চিন্তা বাড়ে। প্রশাসন বৈঠক করে যে নানা পদক্ষেপ করছে, তাতে আমরা খুশি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিবদিঘি তো বটেই, এলাকার আর কোনও জলাশয়ে ওই বিরল প্রজাতির কাছিম রয়েছে কিনা, তা নিয়ে মানচিত্র করা হবে। তা দেখে বন সুরক্ষা কমিটির অনুকরণে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে প্রশাসন কর্তারা মিলে ওই কমিটি করবেন। এ দিন অন্তত ৫টি সুরক্ষা কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়। দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সচিব সুপর্ণা বিশ্বাসও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শিবদিঘিটি বোর্ডের আওতাধীন।