ফাইল চিত্র।
সেপ্টেম্বর মাসে এক সকাল। কলকাতায় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছিল। জায়গাটা বাঙুর ইনস্টিউটের কাছের একটা রেকর্ডিং স্টুডিয়ো। আমার ঝোঁকের মাথায় তৈরি গানের অ্যালবামে উনি আগে-না-করা ন’টি রবীন্দ্র কবিতা পাঠ করতে রাজি হয়ে যে চলে আসবেন, ভাবতেই পারছিলাম না। একেবারে সময়মতো হাজির। জীবনে প্রথমবার তাঁর মুখোমুখি। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করি। তিনি হেসে বলেন, ‘‘ভিতরে চলুন।’’
এই কাজের মধ্যে দিয়েই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার যোগাযোগ, কিছুটা ঘনিষ্ঠতাও। একটা ইচ্ছে আমাকে বলেছিলেন, পরিকল্পনা নিয়েওছিলাম। কিন্তু ইচ্ছাপূরণ আর হল না। রেকর্ডিং করতে সময় নিয়েছিলেন ঘণ্টা দুয়েক। কী অসাধারণ উচ্চারণ! বাংলা, রবি ঠাকুরের উপর দখল। মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আগে আমার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে কাজ করতে রাজি হয়েছিলেন বলে শুনেছি। তাই রেকর্ডিংয়ের ফাঁকে বলেছিলেন, গৌতম, উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও জঙ্গল খুব টানে। বহুবার গিয়েছি, কিন্তু সবই কাজের জন্য। নিছক ঘোরা খুব একটা হয়নি। করোনার পরিস্থিতি একটু ঠিক হলে জানুয়ারিতে পাহাড় ও ডুয়ার্স যেতে চাই। শুনেই বলেছিলাম, আপনি কোনও চিন্তা করবেন না। আমি ব্যবস্থা করে দেব। সেই ব্যবস্থা করা হল না।
করোনা ক্রমেই আমাদের কোণঠাসা করে ফেলেছে। গত মাসে উনি নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলান। এ মাসে আমিও একই রোগের সঙ্গে লড়াই করছি, নার্সিংহোমে শুয়ে। দুপুরে খবরটা শোনার পর থেকেই মনটা ভার হয়ে গিয়েছে। এ দু’মাসেই কেন যেন মানুষটা আপনজন হয়ে উঠেছিলেন। ৬ অক্টোবর বেলভিউ-তে ভর্তি হয়েছিলেন। আমি শুনেই টেলিফোন করি। কথাও হয়। গলা স্পষ্টই ছিল। বলি, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুন। আমাদের অ্যালবামের উদ্বোধন, টিজার রিলিজ, সবই ওঁর করার কথা ছিল। করবেন বলেও জানান। আর উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু দিনের জন্য আসবেন, তা-ও বলেন। রবিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের বেডে শুয়ে মনে হচ্ছে, কেমন যেন সব এখন স্মৃতি হয়ে গেল।
উনি, উত্তরবঙ্গে আমার সঙ্গেই শেষ কাজ করলেন। ন’টা কবিতার সঙ্গে হুট করে একটা দু’লাইনের হিন্দি গান স্টুডিয়োয় করে ফেলেছিলেন। প্রমথেশ বড়ুয়ার কোনও ছবিতে কেএল সায়গেল গান। নিজেই আমাকে বলেন। সেটা আমরা রেকর্ডিং করে রেখেছি। এইটুকুই এখন আমার পাথেয়। (পর্যটনমন্ত্রী)