রাস উৎসবকে ঘিরে সাজ সাজ রব রাজার শহর কোচবিহারে। — ফাইল ছবি।
আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী মদনমোহনের রাস উৎসব। রাজ আমলের ঐতিহ্যকে ধরে রেখে রাসচক্র তৈরির দায়িত্বভার এ বার গেল পান মহম্মদ মিঞার চতুর্থ প্রজন্মের হাতে। পান মহম্মদ মিঞা, আজিস মিঞা, আলতাফ মিঞার পর এ বার রাসচক্র তৈরির দায়িত্ব গেল আলতাফের ছেলে আমিনুর হোসেনের হাতে। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে কোচবিহারের রাস উৎসব। রাজ আমল থেকেই বংশপরম্পরায় কোচবিহার রাস উৎসবের রাসচক্র তৈরি করে আসছে একটি মুসলিম পরিবার।
কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের আমল থেকে রাসচক্র তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়ে আসছে কোচবিহারের হরিণচওড়া এলাকার বাসিন্দা পান মহম্মদ মিঞাকে। সেই শুরু। তার পর থেকে আর এই ঐতিহ্যের বদল হয়নি। পান মহম্মদের মৃত্যুর পর রাসচক্র তৈরি করেছেন পানের ছেলে আজিস মিঞা। আজিসের পর তাঁর ছেলে আলতাফ মিঞা রাসচক্র তৈরির কাজ করেন। বর্তমানে তিনিও বয়সের ভারে ন্যুব্জ। এ বার তাই রাসচক্র তৈরির ভার বর্তেছে আলতাফের ছেলে আমিনুরের উপর। রাসচক্র তৈরির কাজের ফাঁকে আলতাফের ছেলে আমিনুর বলেন, ‘‘রাজ আমল থেকে বংশপরম্পরায় রাসচক্র তৈরির কাজটি আমাদের পরিবার করে আসছে। বর্তমানে বাবা অসুস্থ। তাই এ বছর আমি কাজের দায়িত্ব নিয়েছি। এর সঙ্গে কোচবিহারের ঐতিহ্য জড়িয়ে। রাসচক্রের মধ্যে কোচবিহারবাসীর আবেগ মিশে রয়েছে। খুব ভাল লাগছে যে, আমি এই কাজটি করতে পারছি। আগামী দিনেও এ ভাবেই কাজ চালিয়ে যেতে চাই।’’
রাসচক্র তৈরির কাজে মগ্ন আলতাফের ছেলে আমিনুর। — নিজস্ব চিত্র।
প্রতি বছর লক্ষ্মীপূর্ণিমা থেকে রাসচক্র তৈরির কাজ শুরু হয়। নিয়ম মেনে আমিনুরও কোজাগরী পূর্ণিমা থেকে শুরু করে দিয়েছেন রাসচক্র তৈরির কাজ। হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মুসলিম কারিগর দিয়ে রাসচক্র তৈরি— কোচবিহারের মহারাজার ধর্মনিরপেক্ষতার কথাই আরও এক বার প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। শুধু তাই নয়, রাসচক্রের পাশাপাশি কোচবিহার মদনমোহনের রাস উৎসবে অন্যান্য ধর্মেরও নিদর্শন দেখা যায়। এক দিকে যেমন মুসলিমদের তাজিয়ার নকশা লক্ষ্য করা যায় রাসচক্রে, তেমনই বৌদ্ধ মন্দিরে থাকা ধর্মীয় চক্রের সঙ্গেও অনেকে মিল খুঁজে পান কোচবিহারের রাসচক্রের।
প্রচলিত আচারকে সম্মান জানিয়ে রাসচক্র তৈরির সময় সম্পূর্ণ নিরামিষ আহার করে গোটা পরিবার। আলতাফ বলেন, ‘‘ঠাকুরদার আমল থেকে এই কাজ করে আসছি। মুসলিম হয়েও কোচবিহারের মহারাজা আমার ঠাকুরদাকে হিন্দুদের রাসচক্র তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বংশপরম্পরায় এই কাজ চালিয়ে যেতে চাই। ঠাকুরদার পর আমি এই কাজ করেছি। এ বারই প্রথম আমার ছেলে এই কাজ করছে।’’