পড়া ছেড়ে এখন পরিযায়ী শ্রমিক। প্রতীকী ছবি।
লেখাপড়া করে যে...। প্রবাদবাক্যের পাদপূরণ করার সুযোগ হল না রায়গঞ্জের বিরাহীমখণ্ড গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন আলি, ফায়েজ আলির মতো পড়ুয়াদের। অতিমারির জেরে প্রায় দু’বছর স্কুল বন্ধ ছিল। তাই পড়াশোনা ছেড়ে বেশ কয়েক মাস হল হুমায়ুন, ফায়েজের মতো রায়গঞ্জের বিরাহীমখণ্ডের অনেকে পাড়ি দিয়েছে ভিন্রাজ্যে। অভাবে পড়ে পড়ুয়া থেকে আচমকা পরিযায়ী শ্রমিক বনে গিয়েছে ওই গ্রামের অনেকেই।
প্রায় দু’বছর পর মঙ্গলবার প্রথম রাজ্যের স্কুল-কলেজ খুলেছে। স্কুল খোলার দ্বিতীয় দিনে বিহার লাগোয়া রায়গঞ্জের বিরাহীমখণ্ড এলাকার মহারাজা জগদীশ নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের প়ডুয়াদের এই হাল হকিকত সামনে এসেছে। ওই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল হুমায়ুন এবং ফায়েজ। তাদের মতো অনেকেই এখন স্কুল ছেড়ে রওনা দিয়েছে হায়দরাবাদে, দিল্লিতে বা অন্য কোথাও। তাদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিন্রাজ্যে এখন নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করছে অনেকেই।
বিষয়টির কথা স্বীকার করেছেন বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তামিন সোরেনও। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুল খুললেও ছাত্র কম আসছে। ইতিমধ্যেই কয়েক জন ছাত্র কাজে বাইরে চলে গিয়েছে। এটা আমাদের কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে।’’ বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলছুটের বিষয়টি সামনে এসেছে ‘অ্যাক্টিভিটি টেস্ট’-এর সময়। সেই সময় থেকেই অনুপস্থিত হুমায়ুন, ফায়েজদের মতো অনেকে। ওই বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের ব্যাখ্যা, ‘‘শুধু দারিদ্রের কারণে এই স্কুল-ছুট তা বলব না। স্কুল বন্ধ থাকায় অনেকেই রাজ্যের বাইরে চলে গিয়েছে।’’
হুমায়ুন এবং ফায়েজের পরিবারের সদস্যদের অবশ্য দাবি, ঘরেতে অভাব। তার জেরে স্কুলের পাট চুকিয়ে ফেলতে হয়েছে তাদের। হুমায়ুনের মা হোসেনারা খাতুন বলছেন, ‘‘আমার ছেলে নবম শ্রেণীতে পড়ত। এখন ওরা বাবার সঙ্গে হায়দ্রাবাদ গিয়েছে কাজ করতে। ওর বাবা একাই সংসার চালায়। তাই ওরা পেটের দায়ে কাজ করছে। খারাপ লাগে ওরা লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের টাকাপয়সা নেই। কী করব?’’