স্মার্টফোনেই মিলবে পর্যটন সংক্রান্ত তথ্য। নিজস্ব চিত্র।
সাবেক অফিস থেকে শুরু করে অনলাইন সাইট। এ বার ডিজিটাল দুনিয়ায় আরেক ধাপ এগোনোর চেষ্টা করল রাজ্য পযর্টন দফতর। সে কারণেই এ বার মোবাইল অ্যাপের দুনিয়ায় প্রবেশ করল রাজ্য পর্যটন দফতর।
পযর্টনের খুটিনাটি থেকে বাঙালি রান্না, সংস্কৃতি-কৃষ্টি থেকে হাজারো সুলুক সন্ধান, আরও বেশি করে ভ্রমণ পিপাসুদের হাতে তুলে ধরতেই এই পদক্ষেপ বলে দাবি পযর্টন দফতর সূত্রের। বিধানসভার ভোট শুরুর কয়েকদিন আগেই চালু হয়েছে অ্যাপটি। তাতে রয়েছে বুকিং-এর সুবিধাও। তবে শুধু পযর্টন দফতরের অধীনে থাকা বাংলো বুকিং নয়, রাজ্যের পর্যটন উন্নয়ন নিগম, বন উন্নয়ন নিগম মৎস্য দফতর এবং যুব আবাসের বিভিন্ন লজ, কটেজ বা গেস্ট হাউসের বুকিংও এই অ্যাপ ব্যবহার করে করা যাচ্ছে। অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ‘গুগল প্লে স্টোর’ থেকে ডাউনলোড করা যাবে এই অ্যাপটি।
তবে ভোটের আগে মার্চের শেষ সপ্তাহে তড়িঘড়ি এই অ্যাপ চালু করা নিয়েও দফতরের অন্দরে তো বটেই, পযর্টন মহলেও নানা প্রশ্ন উঠেছে। অ্যাপ তৈরিকে স্বাগত জানালেও তা ভোটগ্রহণ পর্ব মেটার পর নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর করা যেতে বলেও মনে করছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘দফতরের প্রধান সচিব পদ খালি। প্রধান সচিব আপাতত প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিভিশনাল কমিশনারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। দফতরের বিদায়ী মন্ত্রী ভোটে লড়ছেন। অন্য অফিসারেরা কোনও মতে দফতর সামলাচ্ছেন। তাই ভোটের আগে সাফল্য না দেখিয়ে ভোটের পর ভাল করে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলে ভাল হত।’’
রাজ্যে নিবার্চনী বিধি লাগু থাকায় দফতরের কোনও অফিসার প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে পযর্টন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তি ও মোবাইলের। হাতে হাতে মানুষের ঘুরছে স্মার্টফোন। সেই স্মার্টফোনের অ্যাপস থেকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ঘোরাফেরা করাটাই মানুষের অভ্যেসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। অফিসে যাওয়া বা সাইটে ঢুকে তথ্য ঘাঁটার চেয়ে অ্যাপেই মানুষ আজকাল বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম। তাদের সংখ্যাও প্রতিদিন বাড়ছে। তাই এই অ্যাপ-দুনিয়ায় প্রবেশ। তা তৈরি হওয়ায় পরে চালুও করে দেওয়া হয়েছে। নতুন সরকার আসলেই এর প্রচার, বিজ্ঞাপনের কাজ শুরু হবে।
সরকারি সূত্রের খবর, পযর্টনের সঙ্গে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি এই অ্যাপে সাড়াও মিলছে ভালই। গত কয়েকদিনে ১ হাজারের বেশি মোবাইল গ্রাহক অ্যাপটি ডাউনলোড করেছেন। রিভিউও পড়েছে শতাধিক। অ্যাপ র্যাঙ্কিংয়েও পাঁচ উপর নম্বর মিলেছে শতাধিক। একইভাবে প্যাসেফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিল সদস্য সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘পযর্টন এজেন্টদের জন্যও অ্যাপসে ব্যবস্থা রাখা দরকার। এখন পুরোটাই ডাইরেক্ট মার্কেটিং-এ হচ্ছে। তা বাদে অ্যাপসটি খুব ভালই হয়েছে। মানুষ হাতে হাতে পযর্টনের হালহকিকৎ পেয়ে যাবেন।’’ তবে এই তাড়াহুড়ো করে উদ্বোধন নিয়েই খুঁতখুঁতুনি রয়েছে অনেকের। ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সিংহ রায় বলেন, ‘‘এখন যুগটাই তথ্যপ্রযুক্তির। তবে ভোটের পর বিজ্ঞাপন বা প্রচার করে তা চালু করলে ভাল হত। তড়িঘড়ি কেন চালু হল বুঝলাম না।’’
ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যুরিজমের অ্যাপটিতে ঢুকলে একাধিক বিভাগ তৈরি করা হয়েছে। পাহাড়, জঙ্গল, ম্যানগ্রোভ, ঐতিহাসিক স্পট, উইকেন্ড ট্যুর-সহ একাধিক অপশনের ‘এক্সপেরিয়েন্স বেঙ্গল’ অ্যাপসের মূল আকর্ষণ হিসাবে রয়েছে। সেই সঙ্গে জেলাওয়াড়ি পর্যটন আকর্ষণ, ট্যুরিস্ট গাইড, আর্ট ও কালচার, ফেস্টিভ্যাল এবং বাৎসরিক অনুষ্ঠান, গ্যালারি, বুকিং, ম্যাপ ছাড়াও রয়েছে লিঙ্ক অপশন। সেখান থেকে ফেসবুক, ট্যুইটার বা ইউটিউব-সহ বিভিন্ন সরকারি সাইটে সরাসরি যাওয়া সম্ভব। প্যাকেজ, অপারেটরদের তালিকা, ট্যুরিজম ফেয়ার, বিশ্ববাংলা স্টোরের সন্ধান ছাড়াও বাঙালি রান্নার সম্ভারও রয়েছে অ্যাপটিতে।