উন্নিত: এই শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনকেই মহিলা পরিচালিত স্টেশন হিসেবে ঘোষণা করা হল। নিজস্ব চিত্র
শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনকে মহিলা পরিচালিত স্টেশন হিসেবে ঘোষণা করেছে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল। মহিলা স্টেশন ম্যানেজারের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। তেমনিই, রেল সুরক্ষা বাহিনী থেকে স্টেশনের কর্মীরা সকলেই মহিলা হবেন। আগামী কিছু দিনের মধ্যে ধাপে ধাপে স্টেশনটি মহিলা স্টেশনে পরিণত হবে। রেলের ঘোষণায় মহিলা যাত্রীরা খুশি হলেও ওই স্টেশনের মহিলা কর্মীরা অনেকেই ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, টাউন স্টেশনের পরিবেশ ভাল না। সন্ধের পরই এলাকা মাদকাসক্তদের দখলে চলে যায়। নিরপত্তারক্ষী নেই। ফলে মহিলা কর্মীরা কীভাবে কাজ করবেন সে নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
শিলিগুড়ি শহরের মহাবীরস্থান উড়ালপুলের নীচের অংশে টাউন স্টেশন। এক পাশে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড টিকিয়াপাড়া, অন্য পাশে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাগরোকাট-সহ একাধিক বসতি রয়েছে। লোকাল বাসস্ট্যান্ডও স্টেশনের সামনের অংশে। রেলকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, টাউন স্টেশনটিকে মডেল বা মহিলা স্টেশন করার সিদ্ধান্ত ভাল। কিন্তু আগে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন। স্টেশনের আশেপাশের বেশিরভাগ এলাকা দখলদারদের হাতে। সেখানে বড় বাজার, হাট, দোকানপাট হয়ে গিয়েছে। মূল স্টেশনে ঢোকার রাস্তা ঠিকমতো মেলে না। সেই সঙ্গে যাত্রীশেড, শৌচালয়, বসার ব্যবস্থা, পানীয় জল ছাড়াও অধিকাংশ ঘরের অবস্থাও ভাল নয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলিতে নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
রেল সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার শিলিগুড়িতে এসে জানিয়েছিলেন, উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের প্রথম মহিলা পরিচালিত স্টেশন হতে চলেছে শিলিগুড়ির টাউন স্টেশন। এই স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন ৪টি যাত্রীবাহী ট্রেন ছাড়াও অন্তত ৩০টি ট্রেন যাতায়াত করে। কয়েকশো যাত্রী প্রতিদিন এই স্টেশন ব্যবহার করেন। তবে বেশিরভাগই প্যাসেঞ্জার ট্রেন। সাধারণত কোনও দূরপাল্লার ট্রেন এই স্টেশনে দাঁড়ায় না। বর্তমানে স্টেশনে মোট ২৩ জন কর্মীর মধ্যে ১৫ জন মহিলা রয়েছেন। কোনও সমস্যা হলে রেল পুলিশকে খবর দিলে তাঁরা জংশন বা এনজেপি থেকে আসেন। সেটাও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
স্টেশনের কয়েকজন মহিলা কর্মী বলেন, ‘‘রাতের বেলায় কাজ করার মতো পরিবেশ এখানে নেই। অনেক সময় ট্র্যাকে কাজ করতে হয়। তখন ভয়ে গায়ে কাঁটা দেয়। স্টেশনের মহিলা কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ না করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি। পরিকাঠামোগত কাজ না করে, হঠাৎ মহিলা পরিচালিত স্টেশন ঘোষণা করলেই হবে?’’ আরও কয়েকজন জানান, স্টেশনে মহিলাদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত শৌচাগার নেই। স্টেশনের সীমানা ঘেরা দেওয়া নেই। ফলে বহিরাগতদের আনাগোনা লেগেই থাকে। স্টেশন চত্বরেই বাজার বসছে। রেলের জায়গাও দিনদিন দখল হয়ে যাচ্ছে। স্টেশনের তরফে বারবার নিরপত্তা কর্মী চাওয়া হলেও তা মেলেনি।
স্টেশনের বর্তমান ম্যানেজার জলজ কুমার বলেন, ‘‘মহিলা স্টেশন করতে হলে সবার আগে নিরপত্তা কর্মী প্রয়োজন, যা এখানে নেই। রেলের জায়গায় অবৈধ দখলদারেরা বসেছে। তাদের ওঠানো যাচ্ছে না। ৯০ শতাংশ জায়গাই দখল হয়ে গিয়েছে। মহিলা স্টেশন হচ্ছে সেটা জানলেও, কবে থেকে সেটা চালু হচ্ছে তা জানানো হয়নি।’’
স্টেশনে দাঁড়ানো যাত্রী কল্পনা দাস বলেন, ‘‘স্টেশনে এসে শুনলাম এটা মহিলা পরিচালিত স্টেশন হচ্ছে। ভীষণ ভাল লাগছে। তবে মহিলাদের নিরাপত্তার দিকটিও রেলকে সুনিশ্চিত করতে হবে।’’