নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। —ফাইল চিত্র।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম বড় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন (এনজেপি) ঘিরে গাড়ি চালকদের একাংশের থেকে তোলাবাজির একটি ‘সিন্ডিকেট’ সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। রবিবার শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার সি সুধাকরের কাছে এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। রাজনৈতিক মদতেই এই সিন্ডিকেট ব্যবসা শুরু হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও তাতে কোনও রাজনৈতিক দলের নাম বলা হয়নি।
পুলিশ কমিশনার এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। শিলিগুড়ি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘এনজেপি থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কথাও বলা হচ্ছে। এ সব সিন্ডিকেট ব্য়বসা চলবে না।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১৫ ডিসেম্বর এনজেপি থানায় এক গাড়ির মালিক তাঁর চালককে মারধরের হুমকি, তোলাবাজির একটি অভিযোগ দায়ের করেন। রবিবার নতুন করে দ্বিতীয় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। দুই ক্ষেত্রেই অভিযোগ একই। তা হল, এনজেপি এলাকা বাইরের সিকিমের নম্বর বা রাজ্যের অন্য কোনও জায়গার নম্বরের গাড়ি এলাকায় পর্যটক, যাত্রীদের নিতে গেলেই টাকা দাবি করা হচ্ছে। চালকদের মারধর, জামাকাপড় ছিঁড়ে দেওয়া, গাড়ি আটকে টাকার মতো ঘটনা ঘটছে।
রবিবার সকালে এনজেপি এলাকার একটি হোটেলের সামনে সিকিম নম্বরের গাড়ির চালককে হেনস্থা, হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কেন তিনি বাইরে থেকে এলাকায় পর্যটকদের নিতে এসেছেন, তা বলে টাকা চাওয়া হয়। গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নিয়ে জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সকাল থেকে সমাজ মাধ্যমে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ে। এনজেপি এলাকার চালকদের একাংশ জানান, স্টেশনের পার্কিং, ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, রাস্তা, আশেপাশের হোটেল-লজের সামনে এই নতুন সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঘুরে বেড়ায়। কানে ফোন এবং মোটরবাইক নিয়ে সর্বত্র এলাকায় আসা-যাওয়া করা গাড়ির উপরে নজরদারি চলে। ১০০-৫০০ টাকা দাবি করা হয়। শতাধিক গাড়ি নিয়মিত এলাকায় বাইরে থেকে আসে। অভিযোগ, বেশিরভাগের থেকেই এই টাকা আদায় করা হয়।
পর্যটন সংগঠন হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের পরিবহণ শাখার সদস্যরা দুপুরে কমিশনারেটে গিয়ে পুলিশ কমিশনারের দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে তাঁরা এনজেপি থানাতে গিয়েও লিখিত অভিযোগ জানান। সংগঠনের তরফে জয়ন্ত মজুমদার, শৌভিক সরকার জানান, সিকিম শুধু নয়, এনজেপির বাইরের গাড়ি গেলেই সিন্ডিকেট সক্রিয় হচ্ছে। টাকা দাবি করা হচ্ছে, হেনস্থা, হুমকি কিছু বাকি নেই। পুলিশ কমিশনারকে সব জানানো হয়েছে।
এনজেপিতে বরাবর সিন্ডিকেট রাজ চলে বলে অভিযোগ। যা নিয়ে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর গোলমাল, বোমাবাজি, গুলি চালানো, মারপিট নানা কিছু মানুষ দেখেছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এক নেতাকে গ্রেফতারের ঘটনাও সামনে এসেছিল। শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনে থেকে দলের উপর থেকে নজরদারি, নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও আদতে তা নেই তা বলেই দলের একাংশের অভিযোগ। এনজেপি ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের সংগঠনের নেতা উদয় দাস বলেছেন, ‘‘কারা এ সব করছে জানি না। আমাদের কেউ এ সব করেন না। পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিক।’’