প্লাস্টিক মুক্ত অতীতেই ভবিষ্যৎ ভরসার খোঁজ

পরিবেশপ্রেমীরা ভাবছেন, শিলিগুড়ি ফের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। কিন্তু, উত্তরবঙ্গের প্লাস্টিক সামগ্রী নির্মাতাদের অন্যতম সংগঠনের কয়েকজন প্রবীণ সদস্য শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে ‘প্লাস্টিক ক্লাস্টার’ তৈরির স্বপ্ন দেখছেন। সে জন্য মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গের সচিবালয় উত্তরকন্যার কাছে জমিও পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তাঁরা।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০২:২১
Share:

শিলিগুড়িতে ফিরছে বিকল্প ব্যাগ। ছবিটি তুলেছেন সন্দীপ পাল।

পরিবেশপ্রেমীরা ভাবছেন, শিলিগুড়ি ফের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। কিন্তু, উত্তরবঙ্গের প্লাস্টিক সামগ্রী নির্মাতাদের অন্যতম সংগঠনের কয়েকজন প্রবীণ সদস্য শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে ‘প্লাস্টিক ক্লাস্টার’ তৈরির স্বপ্ন দেখছেন। সে জন্য মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গের সচিবালয় উত্তরকন্যার কাছে জমিও পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তাঁরা। সেখানে প্লাস্টিক সামগ্রী নির্মাতাদের জন্য ‘কমন ফেসিলিটি সেন্টার’ তৈরির প্রক্রিয়াও চলছে বলে দাবি তাঁদের। সে জন্যই প্লাস্টিক সামগ্রী নির্মাতাদের অনেকেই একান্তে দাবি করেছেন, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারি করাটা অতটা সহজ হবে না।

Advertisement

শুধু শিলিগুড়ির উপকণ্ঠেই অন্তত ১৩০টি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ সহ নানা সামগ্রী তৈরির কারখানা রয়েছে। প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ হলে রুটি-রুজিতে টান পড়ার আশঙ্কা রয়েছেন অনেক কারখানা মালিকেরই। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ওই কারখানাগুলির উপরে নির্ভরশীলের সংখ্যাও লক্ষাধিকের কম নয়। ফলে, তাঁদের পুনর্বাসনের দিকটি মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার বলে দাবি প্লাস্টিক সামগ্রী নির্মাতাদের।

তা ছাড়া, শিলিগুড়িতে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ তৈরি বন্ধ হলেও দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার ও প্রতিবেশী দেশ নেপাল থেকে তা যে চোরাপথে ঢুকবে না সেটা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে। অতীতে শিলিগুড়ি শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধ হলেও দিল্লি, নেপালের হলুদ রঙের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ রমরমিয়ে এনজেপি, চম্পাসারি, ইস্টার্ন বাইপাস এলাকায় চলেছে।

Advertisement

প্লাস্টিক সামগ্রী নির্মাতা সংস্থার এক কর্তা জানান, রঙিন প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে জুতো জাতীয় কিছু দেওয়া যেতে পারে। রঙিন প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে কোনও খাবার নিলে ভয়ঙ্কর ধরনের বিষক্রিয়ার আশঙ্কা থাকে বলে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফেডারেশনের এক প্রবীণ কর্তার দাবি। তাঁরা এটাও মানেন, যে কোনও ধরনের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মাটিতে মেশে না। নর্দমায় জমে গেলে জলের গতি আটকে দেয়। সব মিলিয়ে তা যে পরিবেশের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর সেটা মানলেও বিকল্প উপার্জনের ব্যবস্থা না হলে উত্তরবঙ্গের প্রায় ১৬৫টি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ তৈরির কারখানা যে বন্ধ করা যাবে না সেটা তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন।

এই অবস্থায়, শিলিগুড়িকে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত করার স্বপ্ন দেখাটা কতটা বাস্তবসম্মত?

শহরের বিশিষ্টজনদের অনেকেই জানান, চার বছর আগে যে কাজটা অনেকটাই সম্ভব হয়েছি তা এখনও করা যেতে পারে। শিলিগুড়ির একাধিক পরিবেশপ্রেমী সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে, শহরবাসীরা সকলে মিলে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলে সরকারের পক্ষেও কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তা জানান, বাসিন্দারা যদি স্বতঃপ্রণোদিত বাবে আগের মতো প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করে দেন, তা হলে তাঁদের তরফেও সব পক্ষকে ডেকে জনশুনানি করে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করার কাজটা সহজ হয়ে যায়।

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ শুধু নয়, পুরসভা, প্রশাসন ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের অফিসার-কর্মীদের অনেকেই জানিয়েছেন, শিলিগুড়ি শহরের বাসিন্দারা বেশির ভাগই যে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ আগের মতো বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলে সরকারি পদক্ষেপ করতে সুবিধা হয়। তাই আগামী জুন মাসের গোড়ায় পরিবেশ দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে গোটা শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনের ডাক জোরাল করতে আসরে নেমেছেন পরিবেশপ্রেমীরা। শহরের বিদ্বজ্জনেরাও তাতে সামিল হবেন বলে অনেকে জানিয়ে দিয়েছেন। শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের উপরে আমাদের আস্থা রয়েছে। তারা যে শহরের মর্যাদাহানির চেষ্টা বরদাস্ত করবেন না সেটা বারেবারেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। আশা করি, প্লাস্টিক বর্জনের ধারাবাহিকতা শহরবাসী আরও জোরদার করবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement