শিলিগুড়িতে পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র (পিএসকে) চালুর ছাড়পত্র দিল কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রক। গত সোমবার কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ চিঠি দিয়ে দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদকে ওই কথা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারের ওই চিঠি জিটিএ কর্তৃপক্ষের হাতেও পৌঁছেছে।
গত বছর অবধি শিলিগুড়িতে একটি পাসপোর্ট আবেদনপত্র গ্রহণ কেন্দ্র চালু ছিল। কিন্তু পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের কথা বলে তা গত বছরের ১ এপ্রিল বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের তরফে তখন তার প্রতিবাদ জানানো হয়।
এদিন দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, “এটা উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং উত্তরবঙ্গের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পুজো উপহার। গত সোমবারই আমি চিঠি পেয়েছি। পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের দফতরের ব্যবস্থা করার জন্য কেন্দ্রের তরফে রাজ্যের মুখ্য সচিবকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত কেন্দ্রটি চালু হয়ে যাবে। এতে বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি মিটবে।”
সরকারের এই ঘোষণার পরে পাহাড়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তরফে দাবি করা হয়েছে, অগস্টে জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গ দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদের সঙ্গে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করে ওই দাবির কথা জানান। তার পরেই কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে ওই অনুমোদন দিয়েছে। জিটিএ প্রধান তথা মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ বর্তমানে নেপালে। এদিন সেখান থেকে ইমেলে তিনি জানান, ‘আমরা অগস্ট মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে এই অঞ্চলের মানুষের কথা ভেবে দ্রুত ওই সেবা কেন্দ্র চালুর অনুরোধ করেছিলাম। বিদেশমন্ত্রী আমাদের সাংসদকে সেবাকেন্দ্র অনুমোদনের বিষয়টি জানিয়েছেন।’
বিমল গুরুঙ্গ বলেছেন, ‘আমরা পাহাড় শুধু নয়, গোটা উত্তরবঙ্গ, সিকিম এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের কথা মাথায় রেখে ওই দাবি করেছিলাম। এই অঞ্চল থেকে পাসপোর্টের জন্য কলকাতা এবং বহরমপুর যাতায়াত করতে বাসিন্দাদের অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। এবার সমস্যা মিটবে।”
গত ২০০০ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন শিলিগুড়িতে পাসপোর্ট আবেদনপত্র গ্রহণ করার কেন্দ্রটি চালু করিয়েছিলেন। প্রতিদিন কম করে ৫০-৬০ আবেদনপত্র জমা হত। নথিপত্র এবং পুলিশের যাচাই-এর পর তা কলকাতার আঞ্চলিক পাসপোর্ট দফতরে পাঠানো হত। সেখান থেকে পাসপোর্টের চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেওয়া হত। ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল কেন্দ্রটি বন্ধ করার পর বাসিন্দাদের পাসপোর্টের জন্য এই অঞ্চল থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দূরে বহরমপুর বা ৬০০ কিলোমিটার দূরের কলকাতা অফিসে যেতে হয়। যাতায়াত ছাড়াও নির্দিষ্ট দিনে সঠিক সময় অফিসে পৌঁছানো নিয়েও সমস্যায় পড়তেন আবেদনকারীরা। নতুন পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রটি চালু হলে সেই সমস্যা এবার অনেকটাই মিটবে। এদিন বিমল গুরুঙ্গ বলেছেন, “শিলিগুড়িতে একটি সঠিক জায়গা দেখার প্রক্রিয়া সরকার শুরু করেছে। সেই সঙ্গে পাসপোর্ট ক্যাম্পও হবে। সমস্ত কিছু নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।”
গুরুঙ্গ জানান, গত ৭ অগস্ট বিজেপি সাংসদ কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে দ্রুত ওই ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সাংসদকে অনুমোদনের কথা জানিয়ে চিঠি দেন। এদিন তা হাতে পাওয়া গিয়েছে।
সরকারি সূত্রের খবর, পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র চালু করে বাসিন্দারা অনলাইনে বা দফতরে গিয়ে সরাসরি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রথমে আবেদনকারীকে নির্দিষ্ট দিন ও সময় দিয়ে একটি টোকেন দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট দিনে সেখানে গেলে সমস্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখা ছাড়াও ছবি তোলা, টাকা জমা, বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়া হবে।
আলাদা আলাদা কাউন্টারে সমস্ত কাজ হবে। এর জন্য কোনও লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজনও পড়বে না। দফতরের ভিতরে থাকা বৈদ্যুতিন ডিসপ্লে সিস্টেমে টোকেন নম্বর এবং পরপর কাউন্টারের নাম জানিয়ে দেওয়া হবে। কাউন্টারগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারেরা কাজগুলি করে দেবেন। শেষে নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে পাসপোর্ট অফিসার সব কিছু দেখে পাসপোর্টের অনুমোদন দেবেন।