তিস্তার পাড় ধরে সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে ধস। নিজস্ব চিত্র।
টানা বৃষ্টিতে পরপর ধসে বিপর্যস্ত সমতলের সঙ্গে পাহাড়ি জনপদের যোগাযোগ।
শনিবার রাত থেকেই ধস বারবার শিলিগুড়ি থেকে সিকিম যাওয়ার রাস্তা ধসে বন্ধ হয়েছে। বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে গাছ উপরে সেবক করোনেশন সেতু লাগোয়া এলাকায় রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ধসের কারণে কালিম্পঙের সঙ্গে লাভা-লিনসের যোগাযোগও বন্ধ হয়ে রয়েছে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নাকাল হয়েছেন যাত্রীরা, দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে পর্যটকদেরও। কালিম্পং থেকে লাভার যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
শনিবার রাতে সিকিমের সঙ্গে যোগাযোগকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে ধস নামে। কালিম্পং থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ভোটেভির এলাকায় ধসে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। শনিবার দুপুর থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি চলছিল এলাকায়। হঠাৎই পাহাড় থেকে মাটি-পাথর ধসে পড়তে শুরু করে বলে সীমান্ত সড়ক বাহিনীর জওয়ানরা জানিয়েছেন। মিনিট দশেক ধরে ঝুরঝুর করে পাহাড় থেকে পাথর গড়িয়ে পড়ে। তাতেই রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তার ওপরে মাটি-পাথরের স্তূপ তৈরি হওয়ায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। রাত থেকেই জাতীয় সড়কে যানজট শুরু হয়ে যায়।
শনিবার গভীর রাতে ধসে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে বাহিনীর জওয়ানরা রাস্তা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করলেও, ঘণ্টাখানেক পরে ফের ধস নামায় কাজ ব্যাহত হয়। রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জাতীয় সড়ক থেকে ধস সরানো সম্ভব হয়নি। রাতের থেকে সড়ক বন্ধ থাকায় দীর্ঘ যানজট ছড়িয়ে পড়ে। এ দিন সকালের পরে রাস্তা খুললেও, দীর্ঘক্ষণ যানজট লেগে থাকে। গাছ উপরে রাস্তা বন্ধ ছিল শিলিগুড়ি ঘেঁষা তিস্তা নদীর সেবক করোনেশন সেতু লাগোয়া এলাকায়। রবিবার সকাল দশটার পরে রাস্তা থেকে গাছের ভেঙে পড়া অংশ সরানো সম্ভব হয়। সেবক-ভোটেভির দু’জায়গার জটে কালিম্পঙের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
দার্জিলিঙের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘বর্ষার মরসুম চলায় সর্বত্র বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেবক ও ভোটেভির দু’জায়গাতেই রাস্তা বন্ধ হওয়ার পরে দ্রুত পদক্ষেপ হয়েছে। তাই কিছুক্ষণ পরে রাস্তা ঠিক হয়।’’
টানা বৃষ্টিতে গাছ পড়ে দার্জিলিঙের লোকেনগরে একটি বাড়ি ভেঙেছে। যদিও সে সময় বাড়িতে কেউ ছিল না বলে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গিয়েছে। দার্জিলিঙেও এ দিন সকাল থেকে বৃষ্টি চলেছে। ধসে বন্ধ হয়ে রয়েছে লাভার সঙ্গে কালিম্পঙের যোগাযোগ। তার জেরে পাহাড়ের বাসিন্দাদেরও ডুয়ার্স হয়ে ঘুরপথে লাভা যেতে হচ্ছে। লাভা-র গাড়ি ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফে জিতেন গুরুঙ্গের দাবি, ‘‘পর্যটকরা কালিম্পং হয়ে লাভা অথবা উল্টোপথেই যাতায়াত করেন। রাস্তা বন্ধ হওয়ায় যাতায়াত বন্ধ। ঘুরপথে বেশি ভাড়ার কারণে অনেকে আসতে চাইছেন না।’’
উত্তরবঙ্গের ট্যুর অপারেটরদের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন এতোয়ার কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যালের কথায়, ‘‘বর্ষার কারণে অনেক বেশি জায়গায় ধস নামে। মাঝেমধ্যেই সিকিম যাতায়াতের জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, ধসের পরে যান চলাচল দ্রুত স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা করতে, যাতে পর্যটকদের অসুবিধে না হয়।’’