—ফাইল চিত্র।
শালুগাড়া থেকে মাটিগাড়া, দূরত্ব যাই-ই হোক না কেন, রাতের শিলিগুড়িতে ঘটনা যেন একই। অতীতে শালুগাড়ার এক পানশালায় নেতা-কর্তাদের একাংশের আনাগোনা, গোলমাল নিয়ে কত কিছুই না বাতাসে ভাসানো হয়েছে। কোনও কিছুই প্রমাণ হয়নি। কিছুই ধোপে টেকেনি। ফলে ধীরে ধীরে চাপা পড়ে গিয়েছে শালুগাড়া-বৃত্তান্ত। পানশালা মহলের কবর, এখন শালুগাড়াকে ছাপিয়ে যাচ্ছে মাটিগাড়া।
আবগারি দফতর সূত্রের খবর, একাধিক পানশালা, ডিস্কো থেক, সিটি সেন্টার, বাহারি রেস্তোরাঁ, আরও কত কিছুই না আছে সেখানে। তা এখন এতটাই জমজমাট যে সেখানে মাঝরাতের আসরে হাজির পুলিশ-প্রশাসনের কয়েকজন প্রথম সারির অফিসারও। শিলিগুড়ি শুধু নয়, বিভাগীয় সদর জলপাইগুড়ির এক কর্তা, কোচবিহার আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের আনাগোনাও দেখা যায় বলে মাটিগাড়ার পানশালা কর্মীদের একাধিক সদস্যের দাবি। সিঙ্গিং-বার মালিক সংগঠনের এক কর্তা জানান, যেখানে এমন নেতা-কতার্দের ছোঁয়া থাকে, সেখানে সিসি ক্যামেরা সব সময় ‘অন’ করা আদতে কতটা সম্ভব সেটা রাজ্য পুলিশের সদর দফতরের কর্তাদের ভাবতে হবে।
বস্তুত, রাতের শিলিগুড়িতে মাটিগাড়াই যে সবচেয়ে বেশিক্ষণ জেগে থাকে তা এখন পুলিশ কমিশনারেটের অনেকেই মানছেন। তাঁদেরও মাথাব্যথার কারণ ওই মাটিগাড়া। কারণ, আর পাঁচটা জায়গায় রাত ১২টা পর্যন্ত পানশালা খোলা থাকলেও মাটিগাড়া তা রাত ২টো পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি রয়েছে। পুলিশের অন্দরের খবর, শাসক দলের প্রভাবশালী নেতাদের একাংশের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের প্রশাসনের এক প্রথম সারির অফিসারও নিয়মিত মাটিগাড়ার একটি রেস্তোরাঁ, পানশালার ব্যাপারে ‘খবরাখবর’ নেন। পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, ভিনজেলায় থাকা এক বড় কর্তাও মাঝেমধ্যে মাটিগাড়াতেই ‘পার্টি’ দিতে পছন্দ করেন। অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাঁদের অনেককে সেখানে হাজির থাকতে হয় বলে পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ একান্তে অভিযোগ করেছেন। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানান, আইনরক্ষক কিংবা প্রশাসনের প্রথম সারির অফিসার হয়ে যদি প্রকাশ্যে রাত ২টো পর্যন্ত হুল্লোড়ে অংশ নেন কী ভাবে সেটা নিয়ে মাটিগাড়া থানা, বিডিও অফিসের মতো জায়গাতেই নানা প্রশ্ন দানা বাঁধছে।
রাতের শিলিগুড়ির কাজ-কারবার নিয়ে আরও অনেক আক্ষেপ-অভিযোগ রয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের মধ্যেই। যেমন, মাটিগাড়ায় বাছাই কিছু এলাকায় রাত নামলেই দেহব্যবসা শুরু হয় বলে অভিযোগ রয়েছে পুলিশের কাছেও। কখনও সঙ্গিনী নিয়েই জাতীয় সড়কের কিনারায় যেন পর পর ‘বার অন হুইলস’।
(চলবে)