উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম। —ফাইল চিত্র।
বাসের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু কর্মী সংখ্যা ধীরে-ধীরে কমছে। যার জেরে বহু বাস রাস্তায় নামান যাচ্ছে না। অভিযোগ, এর ফলে বছর-বছর আয় কমছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের। এই পরিস্থিতি সামলে আয় বাড়ানর পথ খুঁজতে কালঘাম ছুটেছে নিগম কর্তাদের। নিগমের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অরিন্দ্রজিৎ দেবশর্মা বলেন, “বাসের যাত্রাপথ আরও বেশি বাড়াতে হবে। বেশি পথ অতিক্রম করলে আয়ের সুযোগ বাড়বে। এ ছাড়াও কর্মীদের অনুপস্থিতিতে ‘ট্রিপ’ যাতে বাতিল না হয়, তাতে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণ-সহ আনুষঙ্গিক খরচ কমাতেও বলা হচ্ছে।”
নিগমের এক আধিকারিক জানান, যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী না থাকায় বহু বাস বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। রাস্তায় যাতায়াতকারী বাসে আগের মতো টিকিট পরীক্ষাও হচ্ছে না। সে সব বিষয়েও দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, বাস চালানোর সময়ে চালকদের তেল সাশ্রয়ে উৎসাহী করা হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যাত্রী পরিবহণ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ‘লাইফ লাইন’ উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাস পরিষেবা। অভিযোগ, বাম আমলে সংস্থার আর্থিক অবস্থা এতটাই তলানিতে পৌঁছয় যে কর্মীদের ফি মাসে পুরো বেতন পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। রাজ্যে পালাবদলের পরে সংস্থাটিকে ঘুরে দাঁড় করাতে উদ্যোগ শুরু হয়। নতুন বাসের সংখ্যাও বাড়ে। বছর দু’য়েক আগেও এক মাসে টিকিট বিক্রি বাবদ ১৬ কোটি টাকা আয় হয়। কিন্তু প্রবীণ কর্মীদের অনেকে অবসর নিতেই সঙ্কট তৈরি হয়। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাস চালাতে পারছেন না নিগম কর্তৃপক্ষ। যার ফলে আগের
আয়ের অঙ্ক ধরে রাখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ।
নিগম সূত্রে দাবি, বাম জমানায় ফি আর্থিক বছরে টিকিট বিক্রিতে আয় হত ৮০-৮৫ কোটি টাকা। সেটা দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু তেলের দাম, টোল চার্জ-সহ ‘অপারেশনাল কস্ট’ বৃদ্ধিতেও সমস্যা বেড়েছে। কর্মী-সঙ্কটে দৈনিক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাস চালান যাচ্ছে না। বসে থাকা প্রায় একশো বাস রাস্তায় নামালে ফি মাসে গড়ে প্রায় ২ কোটি টাকা আয়ের সুযোগ বাড়ত। সে ক্ষেত্রে ফি মাসে বেতন মেটাতে রাজ্য সরকারের ভর্তুকির উপরে নির্ভরশীলতা অনেকটা কমবে। নিগমের এক কর্তা জানান, এখন ফি মাসে গড়ে ২০ কোটি টাকা দরকার। তেল বাবদ লাগে পায় ১১ কোটি, টোলে সওয়া ১ কোটি টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। টিকিট বিক্রি করে আয় হয় গড়ে প্রায় ১৫ কোটি। ফলে কর্মীদের বেতন মেটাতে বড় ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকারের ভর্তুকির টাকা।
সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন, “সংস্থার উন্নয়নে রাজ্য সরকার উদাসীন। সংস্থাকে ধীরে-ধীরে বেসরকারিকরণের চেষ্টা হচ্ছে বলে আমাদের আশঙ্কা।” তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র কোচবিহার জেলা সভাপতি পরিমল বর্মণের দাবি, “বাম জমানায় কোমায় চলে যাওয়া সংস্থার স্বাস্থ্য অনেকটাই ফিরেছে। বাম জমানার ভুল সিদ্ধান্তের জন্য নতুন করে শূন্যপদে নিয়োগে সমস্যা তৈরি হয়েছে।”