উৎসব: সুদৃশ্য মোড়কে কেক প্যাকিংয়ে ব্যস্ত শেখ জাহাঙ্গির। নিজস্ব চিত্র
শেখ জাহাঙ্গির আলির তৈরি বড়দিনের কেক পাড়ি দেয় শহরের গির্জায়। প্রায় ২০ বছর ধরে জলপাইগুড়ির বজরা পাড়ার জাহাঙ্গির কেক তৈরির কাজ করেন। পারিবারিক বেকারির ব্যবসায় নামার পর জাহাঙ্গির ঠিক করেন নিজেই কেক গড়ার কাজ করবেন। একটা সময় জলপাইগুড়িতে বড়দিনের কেক আসত কলকাতা থেকে। এখন আর সেদিন নেই। জাহাঙ্গির বলেন, ‘‘আমার হাতে তৈরি বড়দিনের কেক আগে বহু খ্রিষ্টান পরিবারে পাঠানো হতো। এখন ওই পরিবারের পাশাপাশি বিভিন্ন গির্জায়ও কেক পাঠাই।’’
জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের পাহাড়পুর গ্রামপঞ্চায়েতের বজরা পাড়ায় ধরধরা নদীর ধারে শেখ জাহাঙ্গির আলির রুটি, বিস্কুট, কেক তৈরির কারখানা। সেখান থেকেই কেক তৈরির গন্ধ ভেসে আসে। শনিবার ওই কারখানায় গিয়ে নজরে পড়ল সযত্নে কেক তৈরির কাজ চলছে জোরকদমে। কেউ ডিম ফাটাতে ব্যস্ত, আবার কেউ বা মোরব্বা কাটছেন। ময়দা-মিষ্টি-দুধ-কাজু দিয়ে তৈরি হচ্ছে মিশ্রণ। কাজ তদারকি করছেন জাহাঙ্গির নিজে। নজরে পড়ল রাতের তৈরি কেক সুদৃশ্য মোড়কে জরানো চলছে। জানা গিয়েছে, প্রায় ১৩ কিলোগ্রামের (কেজি) ময়দা ও কেক তৈরির বাকি মিশ্রণ দিয়ে ৫০ কেজির কেক তৈরির জন্য সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। কেক তৈরির কাজে জাহাঙ্গিরকে সহযোগিতা করেন দীপঙ্কর সরকার, কালীভূষণ রায়, অতুল রায় প্রমুখ।
জাহাঙ্গির বলেন, ‘‘গত বছর সম্পূর্ণ নিরামিষ কেক তৈরি করলেও এই বছরে আর সেই কেক বানাচ্ছি না। একদিকে নিরামিষ কেক তৈরির খরচও যথেষ্ট, আর চাহিদাও তেমন নেই। এই বছরে ২৪টাকা থেকে প্রায় ৩০০ টাকা দামের কেক তৈরি করা হচ্ছে।’’ এর মধ্যেই তার তৈরি কেক প্রাক বড়দিনের উৎসবের জন্য বাজারে বিক্রি হচ্ছে। জলপাইগুড়ি শহরের নয়াবস্তি গির্জার যাজক বিপ্লব সরকার বলেন, ‘‘জাহাঙ্গির ভাইয়ের জন্য আমি গর্বিত। জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রতি ভালবাসার কথাই তো আমরা প্রচার করি। ক্যারল বা নগর কীর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা প্রভু যীশুর মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং মানুষকে ভালবাসার কথাই আমাদের ছড়িয়ে দিই।’’ এদিন থেকে জলপাইগুড়ি শহরে বড়দিনের উৎসব শুরু হয়েছে। শহরের প্রয়াস হলে এই উৎসবের আসরে এদিন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মানুষের ভিড় উপছে পড়েছে বলে জানান উদ্যোক্তারা।