Shaman

Shaman: জন্ডিস সারাতে ওঝা ডেকে বিপদে ক্যানসার রোগী

একবিংশ শতকে কুসংস্কারের এমন নজির দেখে হতবাক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা। এ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারে উদ্যোগী স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

অর্জুন ভট্টাচার্য  

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৩২
Share:

বিপন্ন: ওই রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

জন্ডিস কমাতে এক ওঝাকে দিয়ে তাবিজ, ঝাড়ফুঁক, তুকতাকের মাধ্যমে ক্যানসার আক্রান্ত এক রোগীর চিকিৎসা করচ্ছিলেন পরিবারের লোকজন। ধূপগুড়ির দুরামারি গ্রামের ওই রোগীর অবস্থা এক সময় সঠিক চিকিৎসার অভাবে আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। ওই পরিস্থিতিতে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালের ক্যানসার চিকিৎসার বহির্বিভাগে পাঠান। রোগ সারানোর নাম করে এখনও এই একবিংশ শতকে কুসংস্কারের এমন নজির দেখে হতবাক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা। এ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারে উদ্যোগী স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

ধূপগুড়ি দুরামারির বছর ছেচল্লিশের দিলীপ সরকার তিন বছর ধরে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত। এতদিন মুম্বইয়ের টাটা ক্যানসার সেন্টারে তাঁর চিকিৎসা চলছিল বলে বাড়ির লোকেরা জানান। পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দিলীপ করোনা পরিস্থিতির জেরে চিকিৎসার জন্য প্রায় দেড় বছর মুম্বই যেতে পারছেন না। সম্প্রতি জন্ডিসেও আক্রান্ত হন তিনি। তাঁর স্ত্রী পুতুল সরকার বলেন, ‘‘গ্রামের এক ওঝা জন্ডিস সারাতে তাবিজ দেন। সঙ্গে কিছু জড়িবুটি জাতীয় ওষুধও দেন। সেইসব খাওয়ানো হলেও ওঁর জন্ডিস কমেনি। দুরামারি হাসপাতালে স্বামীকে নিয়ে যাই। চিকিৎসকেরা ওঁকে জলপাইগুড়িতে পাঠিয়েছেন।’’ প্রশ্ন করা গেল, কাছেই তো স্বাস্থ্য কেন্দ্র। সেখানে আগে না গিয়ে ওঝার কাছে গেলেন কেন? রোগীর স্ত্রীর উত্তর, ‘‘প্রতিবেশীদের অনেকেই বলেছেন ওই ওঝার তাবিজ ও জড়িবুটিতে জন্ডিস থেকে সুস্থ হয়েছেন অনেকেই। সেই বিশ্বাসেই ওঝার কাছে স্বামীকে নিয়ে গিয়েছিলাম।’’

শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালের ক্যানসার বহির্বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক রাহুল ভৌমিক রোগীকে পরীক্ষা করেন। ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ ২২.৫ মিলিগ্রাম। এই পরিমাণ খুবই ভয়াবহ। রোগীর অবস্থা যথেষ্ট সঙ্কটজনক। কুসংস্কারের শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। সঠিক সময়ে সরকারি হাসপাতালে এলে অবশ্যই জন্ডিস সারাতে ব্যবস্থা নেওয়া হত।’’

Advertisement

চিকিৎসকদের অভিমত, রোগীকে অবিলম্বে পারকিউটেনাস ট্রান্সহেপাটিক বিলিয়ারি ড্রেনেজ (পিটিবিডি) পদ্ধতিতে বিলিরুবিন কমাতে হবে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই পিটিবিডি করানোর ব্যবস্থা রয়েছে। তাই রোগীকে দ্রুত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক রাহুল ভৌমিক।

জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে হেপাটাইটিস কেন্দ্র চালু হলেও এখনও জন্ডিসের চিকিৎসায় জেলায় বড় অংশের মানুষ এ ভাবেই কুসংস্কারের শিকার হন। জন্ডিসে আক্রান্তদের সঠিক চিকিৎসা করাতে সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করতে জেলা জুড়ে সচেতনতা প্রচার বাড়াতে পদক্ষেপ করা হবে বলে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর থেকে।

জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘জলবাহিত রোগ জন্ডিস প্রতিরোধে এখনও এক বড় অংশের মানুষেরা কুসংস্কারের শিকার হচ্ছেন। হাটে বাজারে এখনও জন্ডিস সারাতে তাবিজ-কবচ বিক্রি করা হচ্ছে। হাতে চুন মাখিয়ে আম গাছের পাতা ও বাকল দিয়ে হাত ধুইয়ে দিয়ে হলুদ জল বের করে দেখানো হচ্ছে জন্ডিস কমছে। এ সবই বুজরুকি। এই ধরনের বুজরুকি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালানো জরুরি ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement