গঙ্গা ভাঙনের আতঙ্কে শুক্রবার সকালে বাড়িঘর ভেঙে নেওয়ার কাজ চলছে মালদহের কালিয়াচক ৩ ব্লকের গোলাপ মণ্ডলপাড়ায়। ছবি: জয়ন্ত সেন।
মালদহের কালিয়াচক ৩ ব্লকের গোলাপ মণ্ডলপাড়ায় গঙ্গাভাঙন অব্যাহত। বুধবার রাত থেকে যেখানে প্রায় ১০০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছিল, শুক্রবার আরও ৫০ মিটার অংশ জুড়ে ভাঙন চলছে। গঙ্গা ক্রমশ গ্রামের দিকে এগিয়ে আসায় আতঙ্কে পারের কাছাকাছি থাকা অন্তত ১৫টি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন।
এ দিকে, সকাল থেকে তুমুল বৃষ্টি হওয়ায় বাড়ি ভাঙতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন এলাকাবাসী। গঙ্গার জলস্তর যে ভাবে বাড়তে শুরু করেছে, তাতে ভাঙনের তীব্রতা বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়েরা। এ দিন দুপুরের পরে গোলাপ মণ্ডলপাড়ায় নৌকায় করে বালির বস্তা ফেলে অস্থায়ী ভাবে ভাঙন রোধের কাজ শুরু করেছে সেচ দফতরের মালদহ ডিভিশন। সেচ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে বালির বস্তা ফেলে গোলাপ মণ্ডলপাড়ায় ভাঙন রোখার কাজ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে।’’
কালিয়াচক ৩ ব্লকে পারদেওনাপুর -শোভাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোলাপ মণ্ডলপাড়া থেকে পারলালপুর পর্যন্ত দু’কিলোমিটার এলাকায় গঙ্গা ভাঙন ঠেকাতে ‘হাই-ডেনসিটি পলিইথিলিন’ ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধের কাজ করেছিল সেচ দফতর। গত বছর সে ভাবে ভাঙন না হলেও বুধবার রাত থেকে ফের গোলাপ মণ্ডলপাড়ায় গঙ্গা ভাঙন শুরু হয়েছে। যে অংশ থেকে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ হয়েছিল তার উজানে প্রায় ৪০ মিটার অংশে ও ভাঙন প্রতিরোধ কাজেরও প্রায় ৬০ মিটার অংশে বুধবার রাত থেকে ভাঙন শুরু হয়। নদী কাছাকাছি চলে আসায় এ দিন সকাল থেকেই অন্তত ১৫টি পরিবার ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে।
এ দিন ভোর থেকে তুমুল বৃষ্টিতে ভিজেই ঘরবাড়ি ভেঙে নেওয়ার পাশাপাশি আসবাব সরিয়ে নিয়ে যান তাঁরা। তাঁদেরই এক জন প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘দিনমজুরি করে সংসার চলে। চাটাইয়ের বেড়া টিনের চাল দেওয়া দু’কামরার বাড়ি খুব কষ্ট করে করেছিলাম। গঙ্গা যে ভাবে গ্রামের দিকে ধেয়ে আসছে, তাতে নিজের হাতে ঘর ভেঙে নিতে বাধ্য হলাম।’’ সনকা মণ্ডল বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে স্বামী মারা গিয়েছেন। টিনের চালের ঘরে বসবাস করছিলাম। ভাঙনের আতঙ্কে স্বামীর ভিটেটুকু ছাড়তে হচ্ছে। নিজের জমি নেই। তাই এখন কোথাও মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলবে কি না, জানি না!’’