কোচবিহারে একটি দোকানে রোজ ডে-র কেনাকাটা। — হিমাংশুরঞ্জন দেব
থরে থরে সাজানো লাল ও হলুদ ডাচ গোলাপ। কোচবিহারের ফুল বাজারে মঙ্গলবার ‘রোজ ডে’-তে ওই দুই রঙের গোলাপেরই ব্যাপক বিক্রি হল। পছন্দের লড়াইয়ে এ যেন লাল-হলুদে একেবারে সমানে সমানে টেক্কা।
দাম তুলনামূলকভাবে খানিকটা বেশি হলেও বছরের বিশেষ দিনে প্রিয়জনকে ডাচ গোলাপ দিতে পকেটের দিকে তাকাননি ক্রেতাদের বেশিরভাগই। সব মিলিয়ে গোলাপ কেনার এমন চাহিদাতেই শুরু হয়ে গেল ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র কাউন্টডাউন। ব্যবসায়ীদের আশা, এ বার রোজ ডে-তেই যা উৎসাহ, তাতে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে বিক্রি বাড়বেই।
ফুল ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রেই জানা গিয়েছে, ক্রেতাদের তালিকায় স্কুল পড়ুয়া কিশোর-কিশোরী থেকে কলেজ পড়ুয়া যুবক-যুবতীরাই শুধু নয়, মাঝ বয়েসি অনেকেই ছিলেন। আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে একটি বেশি বয়সীদেরও ফুলের দোকানে ভিড় জমাতে দেখা গিয়েছে।
সে রকমই এক কলেজ ছাত্রী মুনমুনের কথায়, “ডাচ গোলাপের স্টিক অনেকটা লম্বা। দেখতেও ভরাট। তাই একটু বেশি দাম হলেও টকটকে লাল ডাচ কিনেছি। হাজার হোক রক্ত গোলাপ ভালবাসার প্রতীক।” পাশে দাঁড়ানো অন্য এক যুবক অবশ্য বাছছিলেন হলুদ ডাচ গোলাপ। তাঁর কথায়, “হলুদটা বন্ধুত্ব ও সম্পর্কের প্রতীক বলে ধরা হয়। তাই রোজ ডে-র দিনে আমার এটাই পছন্দ। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে না হয় অন্য রঙের গোলাপ কেনার কথা ভাবব।”
কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, শুরুতে প্রতি পিস ডাচ গোলাপ গড়ে ৩০ টাকা করে বিক্রি হয়। বিকেলের পর চাহিদা বেড়ে যায়। একটি দোকানে এক একটি ডাচ গোলাপের দাম ৮০ টাকাও ছুঁয়েছে। তুলনায় অবশ্য লাল মিনি কুইনের দাম কম ছিল। গড়ে ২০-৩০ টাকায় একটি বিকিয়েছে। কোচবিহার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা নীরেন দেব তাই বললেন, “ব্যবসা ভাল হয়েছে। তাই ভ্যালেন্টাইন্টস ডে নিয়ে আশা বেড়েছে।” কোচবিহার হাসপাতাল লাগোয়া ফুল বাজারের এক ব্যবসায়ী অরূপ রায় কর্মকারের কথায়, “বেঙ্গালুরুর লাল ও হলুদ দুই রঙের গোলাপেরই দারুণ চাহিদা ছিল। গত বারের থেকেই এ বার ভাল বিক্রি হয়েছে। দিনের শেষের দিকে জোগান কমে যাওয়ায় বাড়তি দাম দেন ক্রেতারা।” দিনহাটার বাসিন্দা এক যুবক মনসুর হাবিবুল্লাহ অবশ্য বলেন, “দাম একটু কম হলে ভাল হত।”
ডাচ গোলাপের এমন চাহিদায় উৎসাহ বেড়েছে কোচবিহার জেলা উদ্যান পালন দফতরের কর্তাদের। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ফেব্রুয়ারির ৭-১৪, ‘ভালবাসা সপ্তাহে’ কয়েক বছর ধরেই ভিনরাজ্যের ডাচ বাজিমাত করছে। কোচবিহারের আবহাওয়ায় ওই জাতের গোলাপের পরীক্ষামূলক চাষের অনুমোদন চেয়ে তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। তার সবুজ সঙ্কেত মিলেছে। দফতরের জেলা আধিকারিক খুরশিদ আলম বলেন, “গ্রিন হাউসে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে ডাচ গোলাপের পরীক্ষামূলক চাষের অনুমোদন মিলেছে। উদ্যোগ সফল হলে আগ্রহীদের উৎসাহিত করা হবে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন শুরু হলে দামও অনেকটাই কমবে।”