ঘণ্টা বাজতেই দৌড়ে ক্লাসরুমের পথে। ইংরেজবাজারে। ছবি: স্বরূপ সাহা
করোনা আবহে প্রায় দু’বছর পর বৃহস্পতিবার অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্লাসরুম পঠনপাঠন শুরু হল। পাশাপাশি, প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর এ দিন স্কুলগুলিতে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরও পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। দুই দিনাজপুর ও মালদহের স্কুলগুলিতে প্রথম দিন ছিল এমন চিত্র।
মালদহ স্কুলের চৌহদ্দিতে পা দিতেই পেছন থেকে জাপটে ধরল সহপাঠী বান্ধবী। আনন্দের চিৎকার করে হাতে হাত ধরে ক্লাসরুমের দিকে ছুট লাগাল দুই ছাত্রী। বৃহস্পতিবার ফের স্কুল খোলার প্রথম দিনে এমনই ছবি মালদহের বার্লো বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপশ্রী মজুমদার বলেন, “মেয়েদের উচ্ছ্বাসের কাছে নিয়ম হার মানছে। তবুও দূরত্ববিধি মেনে চলার বার্তা নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে।” রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ হাই স্কুলে পড়াশোনার ফাঁকেই চলছে বাগদেবীর আরাধনার প্রস্তুতি। তবে প্রথম দিন জেলার গ্রামীণ এলাকার স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশের মধ্যে। শিক্ষকদের দাবি, সরস্বতী পুজোর পরে উপস্থিতির হার কিছুটা হলেও বাড়বে।
উত্তর দিনাজপুর ইটাহারের বানবোল হাইস্কুলে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৯০০ জন। বৃহস্পতিবার স্কুলে পঠনপাঠন চালু হওয়ার প্রথম দিন হাজির হয়েছিল ৩৮ জন পড়ুয়া। ওই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক চন্দ্রনারায়ণ সাহা বলেন, “দীর্ঘদিন স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ থাকায় সংসারের হাল ধরতে বহু ছাত্র বিভিন্ন কাজে যোগ দিয়েছে। অনেকে প্রথম দিন স্কুলে আসেনি। তার জেরেই স্কুলে পঠনপাঠন চালুর প্রথম দিন হাতেগোনা ছাত্র হাজির হয়েছিল।”
রায়গঞ্জের সৎসঙ্গ জুনিয়র হাইস্কুলে এ দিন অষ্টম শ্রেণির ১০ জন পড়ুয়া হাজির হয়েছিল বলে প্রধান শিক্ষক গৌতম মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন। এ দিন জেলার নয়টি ব্লকের বেশির ভাগ স্কুলে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ার সংখ্যা হাতেগোনা ছিল। করণদিঘির বেশিরভাগ স্কুলে গড়ে কোথাও দশের, আবার কোথাও একশোর কম পড়ুয়া হাজির হয়েছিল। জেলা শিক্ষা দফতরের দাবি, পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে জেলা জুড়ে প্রচার চালানো হবে। ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’য়ের বিরোধীতা করে প্রাথমিক স্তর থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের স্কুলে পঠনপাঠন চালু-সহ দাবিতে এ দিন রায়গঞ্জে মিছিল করে এসএফআই ও ডিওয়াইএফ।
দক্ষিণ দিনাজপুর বালুরঘাট গার্লস হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ২১০ জন ছাত্রী রয়েছে। তার মধ্যে বৃহস্পতিবার ২১ জন ছাত্রী উপস্থিত হয়েছিল। ওই স্কুলের নবম শ্রেণির ২৪০ জনের মধ্যে ২০ জন ও দশম শ্রেণির ১৭৮ জনের মধ্যে ৪ জন হাজির হয়েছিল। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের সংখ্যাও ছিল হাতেগোনা। বৃহস্পতিবার অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন শুরুর প্রথম দিন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন ব্লকের বেশির ভাগ স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল তলানিতে। খাদিমপুর হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক তমা চক্রবর্তী ও ললিতমোহন আদর্শ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিস চক্রবর্তীর ধারণা, সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার বাড়বে।
তথ্য সহায়তা: অভিজিৎ সাহা, গৌর আচার্য, মেহেদি হেদায়েতুল্লা ও অনুপরতন মোহান্ত