ফাঁকা: মালদহ মেডিক্যালের বহির্বিভাগের ওষুধ কাউন্টার। নিজস্ব চিত্র
বৃহস্পতিবার বন্ধে দুই দিনাজপুর ও মালদহে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবার ছবি কেমন ছিল, তা খোঁজ নিল আনন্দবাজার।
উত্তর দিনাজপুর
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টা। অন্য দিনের মতো এ দিন রায়গঞ্জ মেডিক্যালের ফিভার ক্লিনিকের সামনে লালারস পরীক্ষার জন্য বাসিন্দাদের লাইন উধাও। ক্লিনিকের কাউন্টারের সামনে জনা পাঁচেক লালারস দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রায়গঞ্জের শীতগ্রাম এলাকার বাসিন্দা পেশায় চাষি মফিজুল রহমান বলেন, “বন্ধের জেরে যানবাহন পাইনি। প্রায় ১২ কিলোমিটার দূর থেকে সাইকেলে চেপে লালারস পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে এসেছি।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রায় এক মাস ধরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০ জন করে বাসিন্দা লালারস পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে আসছেন। কিন্তু এ দিন যানবাহন না চলায় হাতেগোনা বাসিন্দা লালারস পরীক্ষা করানোর জন্য আসেন। অন্য দিকে, বহির্বিভাগেও অন্য দিনের মতো ভিড় ছিল না। হাসপাতালের সহকারী সুপার অভিক মাইতি বলেন, “এ দিন হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল।”
জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ৩ গৌতম মণ্ডল বলেন, “সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল। তবে যানবাহনের অভাবে রোগীদের ভিড় কম ছিল।”
দক্ষিণ দিনাজপুর
ধর্মঘটের প্রভাব স্বাস্থ্য পরিষেবায় প্রায় পড়েনি বলে দাবি স্বাস্থ্য দফতরের। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বালুরঘাটের জেলা হাসপাতালের বহির্বিভাগের রোগীর ভিড় অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। তবে জেলার যে সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও ক্যাম্পে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়, এ দিনও সে সব কেন্দ্রে কোভিড পরীক্ষা হয়েছে। ধর্মঘটের দিনেও জেলাতে প্রায় ১২০০ রোগীর কোভিড পরীক্ষা করা হয়েছে৷ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামীণ হাসপাতালেও পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল। তবে দূরের রোগীরা বালুরঘাটে এসে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা এ দিন করাতে পারেননি৷ কারণ রাস্তায় বেসরকারি পরিবহণ ব্যবস্থা ছিল না৷ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে বলেন, "বন্ধের কোনও প্রভাব স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পরেনি। অন্য দিনের মতোই কোভিড পরীক্ষা হয়েছে।"
মালদহ
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা। মালদহ মেডিক্যালের বহির্বিভাগের ওষুধের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে জনা দশেক রোগী। চেয়ারে নিশ্চিন্তে বসে রয়েছেন দুই মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার। গেটে দাঁড়িয়ে গল্পে মশগুল নিরাপত্তা রক্ষীরাও। বন্ধে রোগ কি কম হয়, সহকর্মীকে প্রশ্ন করেন এক নিরাপত্তা রক্ষী। তিনি বলেন, “বহির্বিভাগে ওষুধ নেওয়ার জন্য সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান। ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়। করোনা-আবহে উধাও হয়ে যায় স্বাস্থ্য-বিধি। এ দিন একেবারে ব্যতিক্রমী ছবি।” কালিয়াচকের বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, “চর্মরোগের সমস্যায় ভুগছি। ভিড়ের জন্য হাসপাতালে আসা হয় না। বন্ধে ফাঁকা থাকবে জেনে পড়শির মোটরবাইকে করে হাসপাতালে এসেছি।” বন্ধে লালারসের নমুনা সংগ্রহও কম হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তাঁদের দাবি, “স্বাস্থ্য শিবির চালু হয়েছে। অন্য দিনের তুলনায় এ দিন লালারসের নমুনা সংগ্রহ কিছুটা কম হয়েছে।”