জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরে। — নিজস্ব চিত্র
মেয়েকে খুঁজে পেতে সিআইডি-র উপর ভরসা রাখতে পারছেন না অঞ্জলিদেবী। ৯০ দিন পরেও মেয়ের নিখোঁজের মামলায় সিআইডি চার্জশিট না দেওয়ায় চার অভিযুক্ত জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। অঞ্জলিদেবীর ছেলে শম্ভুবাবু জানান, সিআইডি সম্প্রতি তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিল, বোন সঙ্গীতা কুণ্ডুর হদিশ পাওয়া যাবে। দ্রুত চার্জশিট দেওয়ার আশ্বাসও মিলেছিল। কিন্তু তা হয়নি। এখন তাঁদের ভরসা হাইকোর্ট-সিবিআই।
অঞ্জলিদেবী বলেন, ‘‘পুলিশ, সিআইডি কী করল তা তো দেখলাম। এত মাস ধরে মেয়ে কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছে- ওঁরা তো কিছুই বার করতে পারল না। কেন এমন হল, তাও বুঝতে পারছি না। সিবিআই তদন্ত হলে হয়ত, মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাবে।’’ সঙ্গীতার দাদা শম্ভুবাবুর কথায়, ‘‘ভরসা তো আর থাকছে না। আইনজীবী, পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলছি। সিবিআই তদন্ত হলে যদি কিছু হয়!’’
আগামী সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টে শম্ভুবাবুর সিবিআই তদন্তের আবেদনের উপর জয়মাল্য বাগচির আদালতে মামলার শুনানি রয়েছে। সেখানে সিআইডি-র চার্জশিট না দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি ফের জানাবেন কুণ্ডু পরিবারের আইনজীবী অর্ণব সেনগুপ্ত। অর্ণববাবু জানান, পুলিশ-সিআইডি এখনও অবধি পুরোপুরি ব্যর্থ। হাইকোর্টে সিআইডি-র রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথাও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সিবিআই তদন্তের জন্য হাইকোর্টের কাছে ফের আবেদন করতে চলেছি।’’
গত ১৫ নভেম্বর থেকে মামলায় অভিযুক্ত পরিমল সরকার-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অপহরণ, খুনের ধারাও শেষে যোগ হয়। এমনকি, সঙ্গীতার মোবাইল গঙ্গায় ফেলে দেওয়ার মতো তথ্য সামনে আসে। সিআইডি-র তরফে দাবি করা হয়েছে, নিখোঁজের আগে সেবক এলাকায় সঙ্গীতা গিয়েছিলেন। মোবাইল লোকেশন দিয়ে তা বোঝা গিয়েছে। এর পরে সঙ্গীতা কোথায় গেলেন, তা আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেউ তাঁকে দেখেওনি। অর্ণববাবু বলেন, ‘‘সিআইডি-র তদন্তে ওই অবধি। আর কিছু নেই।’’
কিন্তু চার্জশিট কেন দিতে পারল না সিআইডি? তদন্তকারীদের একাংশ জানাচ্ছেন, ইলেকট্রনিক তথ্য কিছু মিলেছে। কিন্তু তাকে সামনে রেখে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার মতো আরও তথ্য মেলেনি। সঙ্গীতারও হদিশ মেলেনি।
মঙ্গলবার দুপুরে জলপাইগুড়ি সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পেয়ে পরিমল বলেন, ‘‘মনে হয় কোনও ছেলের সঙ্গে সঙ্গীতার সম্পর্ক ছিল৷ তার সঙ্গেই কোথাও চলে গিয়েছে৷ এত কাণ্ড হয়ে গেছে জেনে আর ফিরছে না৷ তবে আমি নির্দোষ। মনে হয়, ও যেখানেই রয়েছে নিশ্চয় ভাল রয়েছে, সুরক্ষিত রয়েছে৷’’ পরিমলবাবু জানান, ১৭ অগস্ট সঙ্গীতার সঙ্গে তাঁর শেষ দেখা হয়৷ ওই দিনই হায়দরাবাদে চলে যান৷ তিনি বলেনস ‘‘পরে ও নিখোঁজ শুনি। সঙ্গীতা চেয়েছিল বলেই তাকে ফ্ল্যাটে থাকতে দিয়েছিলাম।’’ তাঁর স্ত্রী গার্গী বলেন, ‘‘আজ স্বস্তি লাগছে৷ আর আমারও মনে হয়, মেয়েটি কারও সঙ্গে চলে গিয়েছে। কিন্তু একদিনের জন্য হলেও ওকে দেখতে চাই৷’’ পরিমলের দাদা প্রভাতবাবু মনে করেন, ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যই কেউ হয়ত সঙ্গীতাকে কোথাও সরিয়ে রেখেছে৷ বাকি অভিযুক্তরা মন্তব্য করতে চাননি৷ তপন দে-র ছেলে সিদ্ধার্থ বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই বলছিলাম বাবা নির্দোষ৷’’
গত ১৭ অগস্ট শিলিগুড়ির সেবক রোডের জিম-পার্লার সংস্থার কর্মী সঙ্গীতা নিখোঁজ হন৷ ২৬ অগস্ট পরিমল থানায় মিসিং ডায়েরি করেন৷ কিন্তু ৫ সেপ্টেম্বর পরিমলবাবুর বিরুদ্ধেই পাল্টা অপহরণেরর অভিযোগ দায়ের করেন সঙ্গীতার মা অঞ্জলিদেবী৷