নিখোঁজ হওয়ার আগের রাতে সঙ্গীতা কুণ্ডুকে সঙ্গে নিয়ে জিম মালিক পরিমল সরকার শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া একটি গুদামে গিয়েছিলেন বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। যে গাড়িতে ওই তরুণীকে গুদামে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তার চালককে বৃহস্পতিবার পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ইসলামপুর থেকে ধৃত চালকের নাম বিক্রম। এ নিয়ে সঙ্গীতা নিখোঁজ মামলায় মোট ৫ জনকে গ্রেফতার হল। ধৃত বিক্রমকে এ দিন জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে তোলা হলে, বিচারক সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ দিকে পুলিশের সন্দেহ শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা কলেজ স্ট্রিটের একটি শাড়ির দোকানে একটি শাড়ি বদলাতে পাঠানো হয়েছিল জিম-পার্লারের এক কর্মীকে। নিখোঁজ সঙ্গীতা কুণ্ডুর মোবাইল ফোনটি চা পাতার প্যাকেটে মুড়ে তার হাতে দেওয়া হয়েছিল। তদন্তে নেমে জিম পার্লারের কর্মীর মোবাইল ফোন ও সঙ্গীতার ফোনের অবস্থান দেখে পুলিশের সন্দেহ আরও জোরদার হয়।
পুলিশের দাবি, নিখোঁজ হওয়ার সময়ে সঙ্গীতার সঙ্গে মোবাইলটি যে ছিল না তা অনেকটাই স্পষ্ট। কারণ, ১৭ অগস্ট সঙ্গীতা নিখোঁজ হয়েছেন বলে জিম মালিক পরিমল সরকার নিখোঁজ ডায়েরি করেন। অথচ ক’দিন পরে সঙ্গীতার মোবাইলের সিম কার্ড মালদহ এলাকায় জিম-পার্লারের এক কর্মীর হ্যান্ডসেটে কিছুক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল বলেও পুলিশ সন্দেহ করছে। সে জন্যই পুলিশ ধৃতদের লাগাতার জেরা করে মোবাইলের জট ছাড়িয়ে সঙ্গীতার হদিস করার চেষ্টা করছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা বলেন, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব রহস্যের কিনারা করার চেষ্টা চলছে। নিত্যনতুন সূত্র মিলছে। সবই পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।’’
গত সোমবার চারজনের গ্রেফতারির পরে নতুন বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ। গত ১৭ অগস্ট সঙ্গীতা কুন্ডু সেবক রোডের সংস্থার দফতর থেকে নিখোঁজ হন বলে দাবি। তার আগের রাতে পরিমল সরকার নিজের গাড়িতে সঙ্গীতাকে নিয়ে শহর লাগোয়া চম্পাসারির একটি গুদামে যান। সেখানে পৌঁছে গাড়ি চালককে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গভীর রাতে ফের গাড়ির চালক বিক্রমকে ফোন করে ডেকে নেয় পরিমল।
পুলিশের দাবি, জেরায় গাড়ি চালক জানিয়েছে, রাত একটা নাগাদ গুদামে পৌঁছলে সঙ্গীতা গাড়িতে ওঠেনি। শুধু পরিমল গাড়ি চেপে শিলিগুড়ি বাড়ি ফেরে। সঙ্গীতাকে দু’তিন জনের সঙ্গে অন্য একটি গাড়িতে উঠতে দেখা যায় বলে ধৃত বিক্রম জেরায় পুলিশকে জানিয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের সহ সরকারি আইনজীবী প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ জানিয়েছে ধৃত বিক্রম পরিমল সরকার এবং সঙ্গীতা কুণ্ডুকে গভীর রাতে শিলিগুড়ির বাইরে একটি গুদামে ছেড়ে আসে। জেরার জন্য পুলিশ ১৪ দিনের হেফাজত চেয়ে আবেদন করেছিল। আদালত ৭ দিন মঞ্জুর করেছেন।’’
পুলিশের একাংশের অনুমান, তার পরে ওই সংস্থার এক কর্মী পদাতিক এক্সপ্রেসে করে কলকাতা যান। সংস্থার তরফে তার টিকিটের ব্যবস্থা করা হয় বলেও পুলিশ জানতে পেরেছে। ওই ব্যক্তিকে গাড়ি করে স্টেশনে পাঠানো হয়েছিল বলেও পুলিশ সন্দেহ করছে। পুলিশের অফিসাররা জানতে পেরেছেন, ওই ব্যক্তিকে কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের একটি শাড়ির দোকান থেকে প্রায় হাজার দশেক টাকা দামের একটি শাড়ি বদল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ট্রেনে ওঠার আগে তাকে একটি ছোট দার্জিলিং চায়ের প্যাকেট দেওয়া হয়। ওই কর্মীকে জানিয়ে দেওয়া হয়, শাড়িটি বদলানোর পরে একজন চায়ের প্যাকেটটি নিতে তার কাছে আসবে। সেটি কোনও কিছু জিজ্ঞাসা না করে তাকে দিয়ে দিতে হবে।
পুলিশের জেরায় ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, দোকানের কর্মীরা জানান, বেশ কয়েকবার পড়া শাড়ি বদলানোর কোনও প্রশ্ন নেই। তাই তাকে ফিরে আসতে হয়। তা হলে কেন একজন কর্মীকে অকারণে ট্রেনের টিকিট কেটে ব্যবহার করা শাড়ি দিয়ে কলকাতা পাঠানো হল, তাতে পুলিশের সন্দেহ বাড়িয়েছে। শাড়িটি কী সঙ্গীতার না অন্য কোনও মহিলার তাও দেখা হচ্ছে। তেমনিই, চায়ের প্যাকেট নিতে কারও আসার কথা বলা হলেও কোনও লোক সেদিন আসেননি বলে ওই কর্মীই জেরায় জানিয়েছেন।
সঙ্গীতা নিখোঁজ হওয়ার ৮ দিন পর ২৬ অগস্ট জিম-পার্লারের মালিক ধৃত পরিমল সরকার ভক্তিনগর থাকায় মিসিং ডায়েরি করেন। তাঁর সেবক রোডের দফতর-ফ্ল্যাট থেকে তিনি নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন বলে পরিমলবাবু পুলিশকে জানান। প্রথমে পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। তবে পরিমলবাবুর পরিবারের তরফে বারেবারেই দাবি করা হয়েছে, তিনি নির্দোষ। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ষড়যন্ত্র হয়ে থাকতে পারে বলে পরিবারের দাবি।