পথরোধ: একটি মিছিল এ ভাবেই আটকেছে পুলিশ। অন্য মিছিলটি দিব্যি ঘুরেছে আলিপুরদুয়ার শহরে। শুক্রবার। ছবি: নারায়ণ দে
আরএসএসের মিছিল আটকাতে জমায়েতস্থলের পঞ্চাশ মিটার দূরেই তৈরি ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। কিন্তু পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ঘুর পথে দুই ভাগে ভাগ হয়ে বিভিন্ন রাস্তায় মিছিল করে আলিপুরদুয়ার শহর কার্যত স্তব্ধ করে দিলেন স্বয়ং সেবক ও বিজেপির কর্মী সমর্থকরা। মাঝে একাধিক জায়গায় মিছিল আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ। তখন আরএসএস ও বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তিও হয়। শেষ পর্যন্ত শহরের এগারো হাত কালী মন্দিরের সামনে একটি মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলার পর সঙ্ঘের অন্য মিছিলটি অবশ্য বিনা বাধাতেই শহর দাপিয়ে বেড়ায়।
নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝে গত ১৫ ডিসেম্বর আরএসএসের আলিপুরদুয়ার জেলা কার্যালয়ে দুষ্কৃতী হামলার অভিযোগ ওঠে। ওই দিন জেলা কার্যালয়ে ভাঙচুরের পাশাপাশি সঙ্ঘের এক প্রচারককে মারধরেরও অভিযোগ ওঠে। ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার আলিপুরদুয়ার শহরে পুলিশ সুপারের দফতরে অভিযানের ডাক দেয় সঙ্ঘ। সকাল থেকে বাবুপাড়া বিএম ক্লাবের মাঠে সঙ্ঘের জমায়েত শুরু হয়। যাতে সামিল হন কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক, বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা-সহ দলের নেতা-কর্মীরাও।
মিছিল আটকাতে বিশাল পুলিশ বাহিনীও তৈরি ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নির্ধারিত পথের উল্টো দিকে হেঁটে সঙ্ঘের মূল মিছিলটি হাসপাতাল মোড়ের দিকে রওনা হয়। সেই মিছিলে সঙ্ঘের জেলা শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি বিজেপি সাংসদ ও নেতারাও ছিলেন। এমনটা হতে পারে আন্দাজ করে হাসপাতাল মোড়ের আগে ক্ষুদিরাম চৌপথিতে পুলিশের একটি ব্যারিকেড ছিল। কিন্তু সেই ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল এগিয়ে যেতে থাকে। সেখানেও আরএসএসের সঙ্গে এক দফায় ধস্তাধস্তি হয় পুলিশের। এর পর আলিপুরদুয়ার চৌপথিতে পুলিশ আবার মিছিল আটাকানোর চেষ্টা করে। আর এক দফায় ধস্তাধস্তি হয়। শেষ পর্যন্ত ভাঙাপুলের সামনে এগারো হাত কালীবাড়ির সামনে মিছিল আটকায় পুলিশ। তার আগে মিছিল আটকাতে একেবারে শুরুতে থাকা প্রচার গাড়িকে দু’জনে মিলে প্রাণপণে উল্টো দিকে ঠেলছেন দুই পুলিশকর্মী, এই দৃশ্যও দেখা যায়।
পুলিশের বাধা পেয়ে এগারো হাত কালীবাড়ির সামনে রাস্তাতেই অবস্থানে বসে পড়েন নিশীথ-গঙ্গাপ্রসাদরা। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে অবস্থানের পর এক পুলিশ কর্তার হাতে স্মারকলিপি তুলে দিয়ে তাঁরা ফের বিএম ক্লাবের দিকে রওনা হন।
তবে প্রথম মিছিলটি পুলিশ আটকে দিতে পারলেও, বিএম ক্লাবের মাঠ থেকে সঙ্ঘের দ্বিতীয় মিছিলটি তখন বাধের উপর দিয়ে অন্য রাস্তা ধরে শহর দাপিয়ে বেড়াতে থাকে। এবং বিনা বাধায় মিছিলটি ফের জমায়েতস্থলে ফিরেও আসে। এই দুই মিছিলকে ঘিরে ততক্ষণে অবশ্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে আলিপুরদুয়ার শহর। মিছিল ঘিরে ধস্তাধস্তিতে কয়েক জন স্বয়ং সেবক ও পুলিশকর্মী জখম হন বলেও দু’তরফের অভিযোগ।
সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক বলেন, ‘‘একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের কার্যালয় বা কর্মসূচিতে আক্রমণ গণতন্ত্রের উপর কুঠারাঘাতের সমান।’’ বিজেপি জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদের কথায়, ‘‘এ দিন পুলিশের ভূমিকা মানুষ নিজেরাই দেখেছেন। মানুষ এর জবাব দেবে।’’ আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘এই মিছিল সম্পুর্ণ বেআইনি ছিল। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ সঙ্ঘের জেলা নেতা মিন্টু কুণ্ডু পাল্টা বলেন, ‘‘হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় আন্দোলন হবে।’’