কেউ প্যাকেট খুলে গন্ধ শুঁকেই ফেলে দিল বিরিয়ানি, কেউ এক বার খেয়েই ফেলল ডাস্টবিনে। —নিজস্ব চিত্র।
খাওয়াদাওয়া সেরেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যেতে হবে। উত্তেজনায় ছটফট করছিল কচিকাঁচারা। তার মধ্যেই সহপাঠীদের মাধ্যমে কেউ কেউ তত ক্ষণে খবর পেয়ে গিয়েছে যে, বিরিয়ানি খেতে দেওয়া হবে। খাবারের প্যাকেট খুলেই দেখা গেল, খবর ঠিক ছিল। কিন্তু জিভে এক চামচ বিরিয়ানি ঠেকাতেই মুখ ব্যাজার। স্কুল পড়ুয়াদের ‘নষ্ট’ বিরিয়ানি দেওয়ার অভিযোগ উঠল শিলিগুড়ি বয়েজ় হাই স্কুলে। শেষে না খেয়েই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় গেল ওই স্কুলের পড়ুয়া। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি কোনও ভাবে জানতে পারেন। তার পর ওই খুদেদের খাবারের ব্যবস্থা হয় তাঁরই উদ্যোগে।
মঙ্গলবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ওই সভায় আমন্ত্রিত ছিল শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। সেই কারণে সকাল থেকে সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোতে দুপুরের খাবার পৌঁছে যায় প্রশাসনিক উদ্যোগে। কিন্তু শিলিগুড়ি বয়েজ় হাই স্কুলে দুপুরের খাবার পৌঁছতেই শোরগোল শুরু হয়। কচিকাঁচাদের হাসিখুশি মুখগুলো নিমেষে কালো হয়ে যায়। কেউ কেউ বলে, ‘‘এ তো পচা বিরিয়ানি।’’ শেষে প্যাকেটের পর প্যাকেট বিরিয়ানির জায়গা হল স্কুলের সামনে ডাস্টবিনে।
দুপুরে স্কুল চত্বরে যত্রতত্র বিরিয়ানি পড়ে থাকতে দেখা গেল। শেখর দত্ত নামে এক স্কুলপড়ুয়ার কথায়, ‘‘বিরিয়ানি খেতে ভাল লাগছিল না। কেমন গন্ধ লাগছিল। ফেলে দিয়েছি।’’ একই কথা শুভম ঘোষেরও। সে বলে, ‘‘বিরিয়ানিটা খাবার মতো ছিল না। মুখে দিতেই ফেলে দিয়েছি।’’ অনিত সরকার নামে এক ছাত্র বলে, ‘‘আমরা সবাই খাবার ফেলে দিয়েছি। কেউ এক বার খেয়েই ফেলে দিয়েছি। কেউ গন্ধ শুঁকেই ফেলে দিয়েছি।’’ শেষে খিদে পেটে মমতার সভায় উপস্থিত হয় ওই শিক্ষার্থীরা।
তবে এই ঘটনা তাঁর অজানা বলে জানান শিলিগুড়ি বয়েজ় হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা পুর নিগমের মেয়র গৌতম দেব। তিনি বলেন, ‘‘এমন কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে শুনিনি। আমরা সব সময় বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করি। তাদের সঙ্গে ইচ্ছে করে কেউ এমন করে না। তবে অবশ্যই আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
যদিও এই খবর পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সভার মাঝখানেই হঠাৎ পড়ুয়াদের উদ্দেশে মমতাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘খিদে পেয়েছে?’’ মঞ্চের সামনের দিকে বসে থাকা পড়ুয়ারা একযোগে বলে ওঠে ‘‘হ্যাঁ।’’ তখনই তাদের খাবারের প্যাকেট দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। মঞ্চের পেছনের সারিতে বসে থাকা দার্জিলিঙের জেলাশাসক ছুটে যান খাবারের বন্দোবস্ত করতে।