মৃতদের শোকার্ত পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র
মালদহের চাঁচলে পিক আপ ভ্যানের সঙ্গে অটোর সংঘর্ষে আহত আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
ফলে ওই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচ। বুধবার ভোর রাতে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক মহিলা সহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের প্রত্যেকেই কনুয়া-দেবীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা।
একই এলাকার পাঁচজনের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বাসিন্দারা। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রনের দাবিতে কনুয়ায় ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দাদের একাংশ। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের জেরে বিপাকে পড়তে হয় নিত্যযাত্রীদের।
চাঁচলের এসডিপিও অভিষেক মজুমদার আশ্বাস দেন যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার রাতে চাঁচল থেকে অটোতে করে কনুয়া-দেবীগঞ্জ এলাকায় বাড়িতে ফিরছিলেন ছয় যাত্রী। উল্টোদিক থেকে আসা পিক আপ ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই এক কিশোর সহ তিন যাত্রীর মৃত্যু হয়। তিনজনকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই মারা যান দু’জন। চিকিৎসাধীন মালেক আলির অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
পুলিশ জানায়, এ দিন মৃত্যু হয় জ্যোত্স্না মালো(৪৮) ও লতিফুর রহমানের(৬০)। জ্যোত্স্নাদেবীর স্বামী ফণী মালো ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিলেন। লতিফুর রহমান পৌত্র সাজ্জাদকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। নবম শ্রেণির পড়ুয়া সাজ্জাদেরও মৃত্যু হয়েছিল ঘটনাস্থলেই।
বাবা ফণী মালো ও মা জ্যোত্স্নাদেবীকে বাইকে চাপিয়ে চাঁচলের পাহাড়পুরে অসুস্থ দিদিমাকে দেখতে গিয়েছিলেন ছেলে রাজীব। ফেরার সময় তিনি বাবা-মাকে অটোতে তুলে দিয়ে নিজে বাইকে ফিরছিলেন। অন্যদিকে সাজ্জাদের জ্যাঠার কাপড়ের দোকান রয়েছে চাঁচলে। বুধবার তিনি দোকানে যেতে না পারায় বাবা লতিফুর রহমানকে দোকানে যেতে বলেন। লতিফুর রহমান আবার নাতি সাজ্জাদকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। কাজ সেরে ওই অটোতেই ফিরছিলেন চাঁচলের ভাকরি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান শর্বরী সাহার স্বামী রতন সাহা। ঘটনাস্থলে তাঁরও মৃত্যু হয়।
সাজ্জাদদের বাড়ি দেবীগঞ্জে। বাকিরা লাগোয়া কনুয়া ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দা। বুধবার ঘটনার পর থেকেই শোকে স্তব্ধ গোটা এলাকা। তিন পরিবারেই রাত থেকে শুধু কান্নার রোল। ভেঙে পড়েছেন প্রতিবেশীরাও। রাজীব মালো জানান, ‘‘বাবা-মাকে একইসঙ্গে এভাবে হারাতে হবে তা এখনও ভাবতে পারছি না। রাতে বাইকে তিনজনে আসতে অসুবিধে হবে ভেবে ওদের অটোতে তুলেছিলাম।’’
শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন সাজ্জাদের মা নুর বিবি ও বাবা হারুন আলিও। তাদের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় ছিল সাজ্জাদ। বাবা হারুন আলি বলেন, ‘‘বাবা ওকে সঙ্গে যেতে বলায় খুশিতে ডগমগ করছিল। সেই ছেলেটাই এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে জানলে ওকে আমি যেতে দিতাম না।’’