ভাঙনের গ্রাসে তলিয়ে গিয়েছে স্কুল।
ফুলহারের ভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে গোটা গ্রাম। তলিয়ে গিয়েছে স্কুল ভবনটিও। ভাঙনে সব হারিয়ে বাসিন্দাদের অধিকাংশই আশ্রয় নিয়েছেন ফুলহার নদীর বাঁধে। কেউ বা আশ্রয় নিয়েছেন সংরক্ষিত এলাকার খাস জমিতে। পড়ুয়া তাদের ঘরের ছেলেমেয়েরাই। তাই স্কুলও উঠে এসেছে ঘরহারাদের সঙ্গেই। গত দু’বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে আম বাগানে বসছে স্কুল। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বসার জন্য পাশের বাড়ি থেকে চেয়ার এলেও, ত্রিপল পেতে বসতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। গরমে বা শীতে স্কুল চলে ঘন্টাখানেক। আকাশে মেঘ জমলেই ছুটি। এভাবেই চলছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের পারভালুকা প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ফুলহারের ওপারের ওই স্কুল এখন চলছে এপারে, ভালুকা বাঙালিপাড়ার একটি আমবাগানে। দু’বছরেও নতুন স্কুল ভবন তৈরি না হওয়ায় শিক্ষকদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন পড়ুয়ারাও। নতুন স্কুলের জন্য জমি না মেলায় সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি দিলীপ দেবনাথ বলেন, “ওখানে স্কুল ভবন তৈরির জায়গা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। দ্রুত যাতে সমস্যা মেটে তা দেখা হচ্ছে।”
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের জুলাই মাসে ফুলহারের ভাঙনে পার ভালুকা প্রাথমিক স্কুলটি ভেঙে পড়ে। গ্রামটিও ভাঙনে কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তার পর থেকে স্কুলটি চলছে নদীর এপারে একটি আমবাগানে।
স্কুলে প্রধান শিক্ষক ছাড়াও এক স্থায়ী শিক্ষক ও একজন পার্শ্ব শিক্ষিকা রয়েছেন। পড়ুয়ার সংখ্যা ৮৩ জন। শিক্ষকদের পাশাপাশি এলাকার অভিভাবকদের অভিযোগ, দুবছর ধরে আমবাগানে স্কুল চলছে। দু’বছরে দফতরের কর্তারা একাধিকবার এলাকায় এসে পরিস্থিতি দেখে সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিলেও স্কুল ভবন তৈরি হয়নি। এক সময় দেড়শো পড়ুয়া থাকলেও তা কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামচন্দ্র রবিদাস বলেন, “এক বাসিন্দার বাড়িতে অনেক বলেকয়ে মিড ডে মিল রান্নার কাজ চালানো হচ্ছে। এ ভাবে স্কুলে চালানো যায় নাকি? পড়ুয়াদেরও অভিভাবকরা আর স্কুলে পাঠাতে চাইছেন না। সমস্যার কথা প্রত্যেকেই জানেন।”এলাকার অভিভাবক নিমাই মন্ডল, পার্বতী মন্ডলরা বলেন, “নামেই এখন স্কুল চলছে। বড় জোর ঘন্টাখানেক স্কুল চলে। দ্রুত সুষ্ঠ একটা ব্যবস্থা হোক আমরা এটাই চাই।”
জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, যেখানে স্কুল করা দরকার সেখানে বসতি না থাকায় স্কুলেরও প্রশ্ন নেই। এখন নদীর এপারে যেখানে স্কুল চলছে ওই এলাকায় আগে থেকেই একটি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এক কিলোমিটারের মধ্যে পৃথক স্কুল করা যায় না। কিন্তু এক কিলোমিটারের বাইরে এখনও উপযুক্ত কোনও জমি মেলেনি। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের কড়িয়ালি চক্রের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম বলেন, “শেষ পর্য়ন্ত জমির সমস্যা না মিটলে ভালুকা প্রাথমিক স্কুলের সঙ্গেই পারভালুকা স্কুলটি জুড়ে দেওয়া হতে পারে এমন চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছে।”