প্রতীক্ষিত: সেই গুরুত্বপূর্ণ খাম হাতে জেলা প্রেসিডেন্ট মহুয়া গোপ। ছবি: সন্দীপ পাল
‘খামে ভরে তুলে দিও/আঙুলের মিহিন সেলাই’। এই খামে অবশ্য বাংলাদেশের কবি মহাদেব সাহার লেখা কবিতার মতো ‘মিহিন সেলাই’ থাকার কথা ছিল না। কথা ছিল, সেই খামের ভিতরে থাকবে জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি এবং মালবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানদের নাম লেখা কাগজ। এত দিন ধরে জলপাইগুড়ি জেলার তৃণমূল এবং অ-তৃণমূল সবার মুখেই ঘুরেছে একটাই প্রশ্ন— খাম এসেছে? সেই খামটির পৌঁছনোও কম নাটকীয় নয়!
গত মঙ্গলবার, অর্থাৎ বোর্ড গঠনের আগের দিন রাজ্য থেকে খবর পাঠানো হয়, বিকেলের মধ্যে কলকাতা থেকে মুখবন্ধ খাম সংগ্রহ করতে হবে। এত দ্রুত কে কলকাতায় যাবেন? খবর এল, তৃণমূলের আইনজীবী নেতা তপন ভট্টাচার্য কলকাতায় রয়েছেন। তিনি তখন হাইকোর্টে। তিনি ফোনে পেয়েছিলেন সংক্ষিপ্ত নির্দেশ— ‘মহাকরণের ৬ নম্বর গেটে চলে যান’। সেখানে পৌঁছে রাজ্যের এক মন্ত্রীর থেকে খাম সংগ্রহ করেন তপন। খাম নিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছে তাঁর মাথায় বাজ পড়ার দশা। বাগডোগরা বিমানবন্দরের রানওয়েতে গোলমাল, সব বিমান বাতিল। খোঁজ শুরু হয় ট্রেনের টিকিটের। তখন রাত নামছে। বেশি রাতের ট্রেনের টিকিটও মিলল না।
স্থির হল, আজ বুধবার খাম নিয়ে বিমানে রওনা দেওয়া হবে। যা শুনে দলের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘পাগল নাকি! পৌঁছতে পৌঁছতে বোর্ড গঠনের সময় পেরিয়ে যাবে!’ অতএব? কলকাতায় বৈঠক বসে জেলার চেয়ারম্যান খগেশ্বর রায়, মন্ত্রী বুলু চিকবরাইকেরা স্থির করলেন, গাড়ি নিয়ে রওনা দিতে হবে। তখন রাত প্রায় ১০টা। এত রাতে একা একজন খাম নিয়ে রওনা দেবেন? দলের নেতারা ঠিক করলেন, যে ভাবেই হোক, বুধবার সকালেই খাম পৌঁছতে হবে।
রাজি হয়ে গেলেন তপন। রাতেই কলকাতা থেকে গাডি ছুটল জলপাইগুড়ির দিকে। খাম পৌঁছল লাটাগুড়িতে জেলা সভাপতি মহুয়া গোপের বাড়িতে। বাড়ি থেকে খাম নিয়ে জলপাইগুড়ি শহরে পৌঁছে নাম ঘোষণা করলেন মহুয়া। তপন বললেন, ‘‘দলের নির্দেশ পালন করেছি। আর কিছু বলার নেই।’’
নামঘোষণার পরে জেলা তৃণমূল পার্টি অফিস ছেড়ে সবাই চলে গেলেন বোর্ড গঠনের সভায়। টেবিলে পড়ে রইল কাজ ফুরিয়ে যাওয়া, সদ্য নিঃসঙ্গ হয়ে যাওয়া একদা-গুরুত্বপূর্ণ একটি ছেঁড়া খাম।