তিস্তার জল ঢুকে গত দু’সপ্তাহ ধরে প্লাবিত মালবাজারের চাঁপাডাঙা পঞ্চায়েতের বাসুসুবা গ্রাম। শুক্রবার সব্যসাচী ঘোষের তোলা ছবি।
জল বেড়েই চলেছে তিস্তার। শুক্রবার রাতে বিপদসীমার অনেকটাই উপর দিয়ে জল বইছে বলে সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলেই জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া দোমহনি থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সর্তকতা জারি করে সেচ দফতর। ওই এলাকারই সংরক্ষিত ক্ষেত্রে হলুদ সঙ্কেত জারি ছিল। শুক্রবারও সঙ্কেত বহাল রেখেছে সেচ দফতর। বৃহস্পতিবার রাতের পর থেকেই ফের তিস্তায় জল বাড়তে শুরু করে বলে জানা গিয়েছে। মূলত সিকিম পাহাড় এবং ডুয়ার্সে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির কারণেই তিস্তার জল বেড়ে গিয়েছে। তিস্তা ছাড়াও, সঙ্কোশ, রায়ডাক, তোর্সা সব নদীতেই শুক্রবার জল বেড়েছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই জলঢাকা নদীতে জল বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। গত দু’দিনের প্রবল বৃষ্টিতে জলঢাকাতেও জল বেড়েছে।
তিন দিন ধরেই ডুয়ার্স-সহ জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়িতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ একশো মিলিমিটার ছাপিয়ে গিয়েছে। মালবাজার, ময়নাগুড়িতে রেকর্ড পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে। তার জেরেই তিস্তায় জল বাড়া শুরু হয়। ওদলাবাড়ি ব্যারাজেও জল বাড়ছে। তিস্তায় লাল সর্তকতা জারি হওয়ার পরে জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, মালবাজার, মেখলিগঞ্জ শহর লাগোয়া এলাকা দিয়ে বয়েছে তিস্তা। নদীর জল বাড়ায় এই শহরগুলিও ছাড়াও মণ্ডলঘাট, হলদিবাড়ি এলাকাতেও প্রশাসনকে সর্তক করে রাখা হয়েছে। আপদকালীন ব্যবস্থাও মজুত রাখতে বলা হয়েছে। সিভিল ডিফেন্সকেও সর্তক করে রেখেছে প্রশাসন।
অন্য দিকে, সতর্কতা না থাকলেও ফুঁসছে কোচবিহারের বিভিন্ন নদীগুলিও। প্রশাসন সূত্রের খবর, রায়ডাক ১ নদীতে বুধবার হলুদ সতর্কতা ছিল। বৃহস্পতিবার ওই সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়। পাহাড়ে ফের টানা বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হতে পারে বলে আশঙ্কা। তোর্সা, মানসাই, তিস্তা, কালজানিও নদীরও রীতি মতো ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে। রায়ডাক নদী তুফানগঞ্জ ১ ব্লকের নাককাটিগছ ও পুরসভা এলাকার গা ঘেষে বইছে। প্রতি বছর নদীর জল বাড়লে ওই এলাকার বিস্তীর্ণ জায়গা প্লাবিত হয়। এ বারেও পুরসভার ৫ নম্বর এলাকার শতাধিক পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েন। বাঁধ না থাকায় কালজানির জল ঢোকে দেওচড়াই, নাটাবাড়ি, বালাভূতের কিছু এলাকায়। মেখলিগঞ্জের নিজতরফ, তিস্তা পয়েস্তির মতো এলাকায় ফি বছর জল ঢোকে। কোচবিহারের তোর্সার প্লাবনে শহরের ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড জলবন্দি হয়ে পড়ে। জল বেড়ে নদী ক্রমাগত এইসব এলাকার দিকে এগিয়ে আসতে থাকায় আশঙ্কা বেড়েছে। মধুপুর, টাকাগছ-রাজারহাট, কাড়িশালের কিছু এলাকাও বাঁধ না থাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এলাকায়। গত ২৪ ঘণ্টায় কোচবিহার জেলায় মোট বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮১ মিলিমিটার। তারমধ্যে দিনহাটা ও মাথাভাঙায় ৩১ মিমি ও ৩৬ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। এ দিন দিনভর কোচবিহারে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ ছিল মেঘলা।
সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, শুক্রবার রাতের দিক থেকে নতুন করে তিস্তায় জল বাড়েনি। পরিস্থিতি আপাতত স্থিতিশীল রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।