হাসি অমলিন: গ্যারাজে রাকিব। নিজস্ব চিত্র।
স্মার্ট ফোন না থাকায় অনলাইন ক্লাস করতে পারেনি রাকিব শেখ। তার দাদা ভিন রাজ্যের শ্রমিক। কাজ হারিয়ে যখন বাড়ি ফেরে, পরিবার আরও সংকটে পড়েছিল। সেই সময়ে চোপড়া থেকে শিলিগুড়িতে গিয়ে একটি গ্যারাজের কাজে যোগ দেয় রাকিব। চোপড়া হাই স্কুলের নবম শ্রেণির এই ছাত্র এখন গ্যারেজের অনেক কাজ শিখে নিয়েছে। আর কিছু দিন কাজ শিখে বাড়ির কাছে একটি ছোট গ্যারাজ খুলে বসবে বলে জানায় সে। তার কথায়, ‘‘আর স্কুলে ফিরতে চাই না। বাড়িতে গিয়ে গ্যারাজ খুলে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই।’’
গত প্রায় দুই বছর আগেও তার ইচ্ছে ছিল, ভাল করে পড়াশোনা করে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হবে। লকডাউন সব ওলটপালট করে দেয়। সে জানায়, বাড়িতে বয়স্ক বাবা, মা প্রায় শয্যাশায়ী। সে বাড়িতে টাকা দিতে পারে না। যন্ত্রাংশ নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার কথা ছিল তার। এখন রাস্তার ধারের গ্যারাজে যন্ত্রাংশ নিয়েই কাজ করে সে। গাড়ির চাকা সারাই করে, শক্ত করে এঁটে দেয় স্ক্রু। রাস্তায় পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়া দেখলে মন খারাপ হয়। গ্যারাজের ভিতরে গিয়ে বন্ধু পারভেজের সঙ্গে গল্প করে, আরও বেশি করে কাজে মন দেয়।
শিলিগুড়ি হিল কার্ট রোডের ধারের এই গ্যারাজে তার সঙ্গেই কাজ শিখছে মহম্মদ পারভেজ। সে শহরের মাল্লাগুড়ি এলাকার বাসিন্দা। শিলিগুড়ি ভারতী হিন্দি হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। স্কুল খুললে সে যাবে বলে জানায়। স্মার্ট ফোন না থাকায় অনলাইন ক্লাস করতে পারছিল না সে। বাড়িতে নিজেই সাধ্যমতো পড়ে। তার ফাঁকে দুই বেলা কয়েক ঘণ্টা করে কাজ শিখছে। দোকানঘর ঝাড়পোচ থেকে চাকায় পাম্প দেওয়া এবং গাড়ি সারাইয়ের সময় যন্ত্রাংশ জোগানের কাজ তাকে দিয়েই হয়।
পারভেজ জানায়, তার বাবা একটি গুদামের কর্মী। দাদা, দিদিকে নিয়ে ৫ জনের সংসার। অভাবের সংসারে আর চুপ করে বসে থাকতে পারেনি সে। লকডাউনের সময় থেকে নিজেই কাজে যোগ দিয়েছে। সে বলেন, ‘‘গাড়িতে পাম্প দিলে ৫ টাকা করে পাই। তা দুই বন্ধু ভাগ করে নেই। টাকা জমিয়ে স্মার্ট ফোন কিনব।’’