জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন

প্রতীক্ষালয়ে গ্যাস জ্বালিয়ে ভুরিভোজ রেলকর্মীদের

ডাল, পটলের দোরমা, বেগুনি, পাঁপড় ভাজা, মাংস, চাটনি, মিষ্টি। বুধবার সকাল থেকেই জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন চত্বর ভরে গিয়েছিল সুখাদ্যের সুবাসে। পরে জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত তিন কর্মীকে বিদায় সংবর্ধনা জানাতে রেল স্টেশনের উচ্চ শ্রেণির যাত্রী প্রতীক্ষালয় দখল করে গ্যাস জ্বালিয়ে পিকনিক করলেন একদল রেলকর্মী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৫ ০২:২৪
Share:

চলছে রান্না। বুধবার ছবিটি তুলেছেন সন্দীপ পাল।

ডাল, পটলের দোরমা, বেগুনি, পাঁপড় ভাজা, মাংস, চাটনি, মিষ্টি।

Advertisement

বুধবার সকাল থেকেই জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন চত্বর ভরে গিয়েছিল সুখাদ্যের সুবাসে। পরে জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত তিন কর্মীকে বিদায় সংবর্ধনা জানাতে রেল স্টেশনের উচ্চ শ্রেণির যাত্রী প্রতীক্ষালয় দখল করে গ্যাস জ্বালিয়ে পিকনিক করলেন একদল রেলকর্মী। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা প্রতিবাদ জানালেও পিকনিকে মশগুল রেলকর্মীরা কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ। উল্টে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের ছবি তুললে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

রেলের কাটিহার বিভাগের এডিআরএম পার্থসারথি শীল ঘটনার কথা শুনে অবাক। তিনি বলেন, “এটা করা যায় না। কেমন করে ওই ঘটনা ঘটেছে, খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” রেল স্টেশনের উচ্চ শ্রেণির প্রতীক্ষালয় দখল করে পিকনিকের ঘটনায় ক্ষুব্ধ জলপাইগুড়ির তৃণমূল সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মণও। তিনি বলেন, “প্রতীক্ষালয় যাত্রীদের জন্য। সেখানে রেলকর্মীরা পিকনিকের আয়োজন করেন কোন অধিকারে? খোঁজ নিয়ে রেল মন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব।”

Advertisement

যাত্রীদের অভিযোগ, এদিন প্রতীক্ষালয়ে সকাল থেকে পিকনিকের আয়োজন চলে। সেখানে যাত্রীদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বেলা বাড়তে খাবারের গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে কৌতূহলও ছড়িয়ে পড়ে। তখনই প্রশ্ন ওঠে, কেন এ ভাবে স্টেশনের উচ্চ শ্রেণির প্রতীক্ষালয় দখল করে রান্নার আয়োজন? স্টেশন ম্যানেজার নৃপেন রায়ের সাফাই, “এখানে পৃথক হল ঘর বা রিক্রিয়েশন রুম নেই। তাই প্রতীক্ষালয়ে রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” রেলের আধিকারিকরা ওই বক্তব্য শুনে অবাক। তাঁরা জানান, প্রতীক্ষালয়ে গ্যাসের ওভেন জ্বালিয়ে রান্নার আয়োজন অন্যায়।

স্টেশন ম্যানেজার জানান তাঁদের তিন কর্মী এপ্রিল মাসে অবসর নেন। বুধবার তাঁদের বিদায় সংবর্ধনা জানাতে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠান উপলক্ষে অন্তত পনেরো জন কর্মীর জন্য ভুরিভোজের ব্যবস্থা করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্যাংম্যান জানান, বিরাট পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছে। দুপুরের পিকনিক। তাই সকাল থেকে রান্না চলেছে।

যখন প্রতীক্ষালয় দখল করে রান্না চলছে তখন প্ল্যাটফর্মে গিজগিজ করছে যাত্রী। তাঁদের অনেকে ঘটনা শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। উত্তম রায় নামে এক যাত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যখন স্বচ্ছ ভারত নির্মাণের কথা বলছেন তখন রেলকর্মীদের একাংশ যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের কথা লাটে তুলে স্বেচ্ছাচারিতার চরমে উঠে যা খুশি তাই করছেন। এই নোংরামো মেনে নেওয়া যায় না।” রেল কর্মীদের ওই ঘটনা ভাল চোখে দেখছেন না জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। দলের জেলা সম্পাদক বাপি গোস্বামী বলেন, “এত বড় অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি রেল মন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিকদের জানানো হবে।”

জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “এমনিতে টাউন স্টেশনের পরিস্থিতি খারাপ। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই, অপরিচ্ছন্ন। তাঁর উপরে যদি রেলের কর্মীরা যাত্রী প্রতীক্ষালয় দখল করে পিকনিক করেন, ধিক্কার জানানো ছাড়া অন্য ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। যে রেলকর্মীরা ওই কাজে জড়িত, তাঁদের শাস্তি হওয়া দরকার।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদার বলেন, “বুঝতে পারছি না প্রতীক্ষালয়ে কেমন করে পিকনিক হয়। ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা না নেওয়া হলে রেল কর্তাদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement